Sunday, December 21, 2025
spot_img
Homeবিশেষ প্রতিবেদনতাইওয়ানকে ট্রাম্প প্রশাসনের রেকর্ড অস্ত্র সহায়তা

তাইওয়ানকে ট্রাম্প প্রশাসনের রেকর্ড অস্ত্র সহায়তা

চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক চাপের প্রেক্ষাপটে তাইওয়ানের জন্য রেকর্ড পরিমাণ অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এক চুক্তির আওতায় মোট ১ হাজার ১১০ কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে বলে ওয়াশিংটন জানিয়েছে। তাইওয়ানের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এটিই সবচেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রির চুক্তি। গত বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের অধীনে তাইওয়ানের কাছে এটি দ্বিতীয় বড় অস্ত্র বিক্রির ঘটনা। এমন এক সময়ে এই সিদ্ধান্ত এল, যখন বেইজিং কূটনৈতিক ও সামরিক উভয় ক্ষেত্রেই তাইওয়ানের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই চুক্তিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

চীন দীর্ঘদিন ধরে তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করে আসছে। দ্বীপটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করা হবে, এমন অবস্থান থেকেও কখনো সরে আসেনি বেইজিং। পাশাপাশি দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরো এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করছে দেশটি, যা নিয়ে প্রতিবেশী একাধিক দেশের সঙ্গে চীনের বিরোধ বহুদিনের।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, প্রস্তাবিত চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আট ধরনের অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র সরবরাহ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রকেট উৎক্ষেপণব্যবস্থা হিমার্স, আধুনিক হাউইটজার কামান, জ্যাভলিন ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং আত্মঘাতী ড্রোন। এসব অস্ত্র তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা কাঠামোকে আরও কার্যকর ও আধুনিক করে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পর্যাপ্ত আত্মরক্ষার সক্ষমতা নিশ্চিত করা এবং দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তাইওয়ানকে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সহায়তাকে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই অস্ত্র বিক্রির প্রধান লক্ষ্য হলো তাইওয়ানের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকায়ন করা এবং তাদের প্রতিরক্ষা শক্তি জোরদার করা। ওয়াশিংটনের পরামর্শ অনুযায়ী তাইওয়ান তার সামরিক কৌশলে পরিবর্তন আনছে, যেখানে গেরিলা যুদ্ধের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এই কৌশলের অংশ হিসেবে তাইওয়ান তুলনামূলকভাবে ছোট, কম খরচের কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে। মোবাইল রকেট ব্যবস্থা ও উন্নত ড্রোনের মাধ্যমে চীনের বৃহৎ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে দ্রুত ও নমনীয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের এক মুখপাত্র এই সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমেই শান্তি রক্ষা সম্ভব এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাইওয়ান দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

এর আগে গত মাসে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন, ২০২৬ থেকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বাজেট অনুমোদন দেওয়া হবে। ওই ঘোষণায় বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো ধরনের আপস করা হবে না এবং প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত তাইওয়ান প্রণালীতে চলমান উত্তেজনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। একই সঙ্গে এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষায় ওয়াশিংটন তার অবস্থান আরও স্পষ্ট করছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments