Sunday, December 21, 2025
spot_img
Homeসম্পাদকীয়এনএইচএস ডেন্টাল সংকটে বড় সংস্কারের প্রয়োজন

এনএইচএস ডেন্টাল সংকটে বড় সংস্কারের প্রয়োজন

ইংল্যান্ডে এনএইচএস ডেন্টাল চুক্তিতে প্রস্তাবিত সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে যেসব রোগী জটিল ও জরুরি দাঁতের সমস্যায় ভুগছেন এবং দীর্ঘদিন চিকিৎসা না পেয়ে কষ্ট পাচ্ছেন, তাদের জন্য নতুন ব্যবস্থাগুলো স্বস্তির বার্তা আনতে পারে। দাঁত ও মাড়ির তীব্র ব্যথা দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে, আর প্রয়োজনের সময় দাঁতের চিকিৎসা পাওয়া যেন কারও জন্যই অধরা না থাকে, সেটিই হওয়া উচিত একটি কার্যকর স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূল লক্ষ্য।

সাম্প্রতিক এক পরামর্শ প্রক্রিয়ার পর জরুরি ও জটিল কেসকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে দুটি বড় সংকট। একদিকে অনেক এলাকায় জরুরি ডেন্টাল সেবার তীব্র ঘাটতি, অন্যদিকে জটিল সমস্যায় ভোগা রোগীদের ধারাবাহিক চিকিৎসা না পাওয়ার বাস্তবতা। আগামী এপ্রিল থেকে এনএইচএসের অর্থপ্রদানের কাঠামোতে পরিবর্তন আসছে, যেখানে একাধিকবার চিকিৎসার প্রয়োজন হলে রোগীরা আলাদা আলাদা অ্যাপয়েন্টমেন্টের বদলে একটি প্যাকেজ বুক করতে পারবেন। একই সঙ্গে তীব্র ব্যথা ও সংক্রমণের মতো সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য বেশি জরুরি স্লট দেওয়ার ক্ষেত্রে ডেন্টিস্টদের উৎসাহিত করা হবে।

তবে এই ঘোষণাকে ইংল্যান্ডের ডেন্টাল সংকটের পূর্ণাঙ্গ সমাধান হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। যুক্তরাজ্যের অন্য অংশগুলোতেও এনএইচএস ডেন্টাল সেবায় জনবল সংকটসহ নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকৃত হওয়ায় এই পরিবর্তনগুলো কেবল ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ব্রিটিশ ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ ডেন্টাল প্র্যাকটিস কমিটির একজন শীর্ষ প্রতিনিধি মন্তব্য করেছেন যে, এই পরিবর্তনগুলো ব্যর্থ চুক্তির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সংশোধন হলেও, এগুলো মূলত সীমিত পরিসরের সমন্বয় মাত্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত নতুন ফি কাঠামো বর্তমান ব্যবস্থায় কিছুটা রদবদল আনছে, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে প্রয়োজন একটি মৌলিক সংস্কার।

২০০৬ সালে চালু হওয়া এনএইচএস ডেন্টাল চুক্তি আগের ব্যবস্থার সঙ্গে বড় ধরনের বিচ্ছেদ তৈরি করেছিল। তখন রোগীরা আর সাধারণ চিকিৎসকের মতো করে নির্দিষ্ট ডেন্টিস্টের কাছে নিবন্ধনের অধিকার পাননি। এর পরিবর্তে ডেন্টিস্টদের অর্থপ্রদান শুরু হয় নির্দিষ্ট কার্যক্রমের এককের ভিত্তিতে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই ব্যবস্থার দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং সংসদীয় কমিটিসহ বিভিন্ন মহল তা তুলে ধরে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, তখন যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়েছিল, তার অনেকগুলোই আজও রয়ে গেছে। এর মধ্যে দরিদ্র ও অবহেলিত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জন্য ডেন্টাল সেবায় প্রবেশাধিকার সবচেয়ে বড় সংকট।

কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দাঁতের সমস্যা নিয়ে এনএইচএসের জরুরি নয় এমন হেল্পলাইনে ফোনের সংখ্যা এক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। একই সঙ্গে দাঁতের ব্যথা বা সংক্রমণের কারণে জরুরি বিভাগে যাওয়ার হার গত চার বছরে প্রায় অর্ধেক বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগী অধিকার বিষয়ক একটি সংস্থার নতুন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা, যেখানে কেউ কেউ বাধ্য হয়ে নিজের দাঁত নিজেই তুলে ফেলেছেন।

ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ডেন্টিস্টের সংকট চলছে। পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে কাজ করতে উৎসাহ দিতে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হলেও তা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আনতে পারেনি। শিশুদের মধ্যে দাঁতের ক্ষয় কমানো এবং ডেন্টাল স্বাস্থ্যগত বৈষম্য দূর করার উদ্যোগও স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে বিদ্যালয়ে তত্ত্বাবধানে দাঁত ব্রাশ করার কর্মসূচি চালুর সিদ্ধান্ত একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে ফল দিতে পারে।

সরকার এই সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই একটি নতুন ডেন্টাল চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের আবার নিবন্ধনের অধিকার ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে সবার জন্য সমানভাবে সেবা পাওয়ার পথ খুলে যায়। পাশাপাশি জরুরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাড়ানোর বিদ্যমান পরিকল্পনার সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘোষণার সম্পর্ক এবং বাস্তবায়নের সময়সূচি স্পষ্টভাবে তুলে ধরা জরুরি। এতে করে সাধারণ মানুষ জানতে পারবে কী পরিবর্তন আসছে এবং সেই অগ্রগতি কতটা কার্যকর হচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments