Saturday, December 27, 2025
spot_img
Homeসম্পাদকীয়ইংল্যান্ডের আবাসন সংকটের করুণ বাস্তবতা

ইংল্যান্ডের আবাসন সংকটের করুণ বাস্তবতা

ইংল্যান্ডের সামাজিক আবাসন ব্যবস্থা যে জনগোষ্ঠীর জন্য তৈরি হয়েছিল, আজ তাদেরই বড় অংশকে বাইরে ঠেলে দিচ্ছে। দীর্ঘদিনের কঠোর মিতব্যয়ী নীতি, সংকুচিত যোগ্যতার নিয়ম এবং আবাসন তহবিলে ধারাবাহিক ঘাটতির কারণে এখন সবচেয়ে দুর্বল মানুষরাই এই ব্যবস্থার সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নতুন প্রতিবেদনে এক দাতব্য সংস্থা জানায়, সামাজিক আবাসনের ঘর কমতে কমতে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে অনেক ক্ষেত্রেই বাড়িভাড়ার বকেয়ার ইতিহাস থাকলে আবেদনকারীদের সরাসরি বাদ দেওয়া হয়। সাতজনের মধ্যে প্রায় পাঁচজন, যাদের ভাড়া বকেয়া এবং কোনও পরিশোধ পরিকল্পনা নেই, তাদের সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ পড়তে হয়। ফলে, যে কল্যাণব্যবস্থা গৃহহীনতা কমানোর কথা বলত, সেই ব্যবস্থাই গৃহহীনতার জন্ম দিচ্ছে।

কঠোর আর্থিক যাচাই এবং স্থানীয় সংযোগের মতো শর্ত সামাজিক আবাসনের জন্য আবেদনকারীদের তালিকা আরও ছোট করে দিচ্ছে। যারা শেষ পর্যন্ত তালিকায় উঠতে পারেন, তাদেরও মোকাবিলা করতে হয় আরেক দফা প্রি টেনেন্সি যাচাইয়ের। সেখানে প্রায় এক তৃতীয়াংশ আবেদনকারীকে বাদ দেওয়া হয় এই যুক্তিতে যে তারা সামাজিক ভাড়ার তুলনামূলক কম খরচটিও বহন করতে পারবেন না। এ সমস্যার শেকড় মূলত কম সুবিধাভোগী পরিবারের জন্য নির্ধারিত ভাতা যেটি বাস্তবতার তুলনায় অনেক কম। তাই গৃহহীনতা বাড়ছে কোনও দুর্ঘটনার কারণে নয়, বরং পরিকল্পিত নীতির কারণে।

এই সংকটের গোড়ায় রয়েছে জোট সরকারের সময়কার মিতব্যয়ী কর্মসূচি। সামাজিক আবাসন নির্মাণের পরিবর্তে সরকার যোগ্যতার মানদণ্ড কঠোর করে দেয়। সরকারের তৎকালীন নেতৃত্ব সামাজিক আবাসন নির্মাণে অনাগ্রহী ছিল, কারণ ধারণা ছিল এতে রাজনৈতিকভাবে বিরোধী ভোটার তৈরি হতে পারে। ফলে আবাসন খাত ক্রমশ বেসরকারি সংস্থার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যাদের আগে ছিল মানবিক সহায়তার উদ্দেশ্য। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক স্থিতিশীলতার শর্ত আরোপ হওয়ায় তারা ক্রমে করপোরেট কাঠামো গ্রহণ করে। নতুন আবাসন তৈরিতে ব্যয়বহুল ঋণের প্রয়োজন হয়, আর বাড়িভাড়া বকেয়া রাখা রূপ নেয় ‘ব্যবসায়িক ঝুঁকি’তে। এতে দুর্বল জনগোষ্ঠী স্বাভাবিকভাবেই তালিকা থেকে ছিটকে পড়তে থাকে।

ইংল্যান্ডে সামাজিক আবাসন মূলত স্থানীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে সরকারি সহায়তায় তৈরি হতো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রণীত ‘রাইট টু বাই’ নীতিতে বিপুল পরিমাণ সরকারি আবাসন বিক্রি হয়ে যায়। সেগুলোর খুব সামান্য অংশ পুনর্নির্মাণ করা হয়। ফলে স্থানীয় কাউন্সিলগুলো রাজস্ব হারায়, এবং দায়িত্ব ধীরে ধীরে স্থানান্তরিত হয় বেসরকারি আবাসন সংস্থায়। পরবর্তী আইন পরিবর্তনে কাউন্সিলগুলোকে এমন ক্ষমতা দেওয়া হয় যাতে তারা আবাসনের যোগ্যতার মানদণ্ড সংকুচিত করতে পারে, ফলে বাস্তবে প্রয়োজনী মানুষই তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। বাজেট সংকোচনের কারণে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তাও দেওয়া সম্ভব হয় না।

এই পুরো কাঠামোর কেন্দ্রে রয়েছে এক চরম বৈপরীত্য: মানুষ বেসরকারি ভাড়া দেওয়ার জন্য খুবই দরিদ্র, আবার একই সময়ে সামাজিক আবাসনের আর্থিক যাচাইয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্যও খুব দরিদ্র। স্কটল্যান্ড প্রমাণ করেছে যে এটি নীতিনির্ভর সিদ্ধান্ত। সেখানে আইন অনুযায়ী আবাসন সংস্থাগুলো বাধ্য গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসনের। ইংল্যান্ডে যেখানে নতুন আবাসনের মাত্র ২৭ শতাংশ গৃহহীনদের দেওয়া হয়, স্কটল্যান্ডে তা দ্বিগুণ। ওয়েলসও স্কটল্যান্ডের পথ অনুসরণে আগ্রহী।

এই সংকট কাটাতে কল্যাণব্যবস্থায় বড় ধরনের পুনর্বিবেচনা জরুরি। বিশেষ করে সর্বনিম্ন আয়ের মানুষদের সামাজিক আবাসনে কার্যকর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সমসাময়িক পরিকল্পনায় দীর্ঘ মেয়াদে যে তহবিল বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে, তা ইতিবাচক হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিবছর অন্তত ৯০ হাজার সামাজিক আবাসন নির্মাণ ছাড়া সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। অন্যথায় বর্তমান পরিকল্পনা শুধু তলাবিহীন জাহাজে আসবাব বদলের মতো হবে। সত্য হচ্ছে, ইংল্যান্ড যদি সামাজিক আবাসনকে জনকল্যাণ হিসেবে পুনর্গঠন না করে, তাহলে সবচেয়ে দুর্বল মানুষরাই এই ভাঙা ব্যবস্থার চাপে ডুবে যাবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments