যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সংক্রান্ত একটি বহুল আলোচিত মামলায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। এক ফেডারেল বিচারকের নির্দেশে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইসির হেফাজত থেকে আপাতত মুক্ত থাকছেন কিলমার আব্রেগো গার্সিয়া। বিচারকের আদেশ অনুযায়ী, নির্ধারিত আইসি চেকইনের সময় তাকে পুনরায় আটক করা যাবে না।
মেরিল্যান্ডের একটি ফেডারেল আদালতের জেলা বিচারক রায়ে বলেন, বর্তমান প্রশাসনের কাছে আব্রেগোকে অভিবাসন ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রাখার জন্য পর্যাপ্ত আইনগত ক্ষমতা নেই। এই রায়ের পর শুক্রবার সকালে নির্ধারিত আইসি চেকইনের সময় সরকারকে তাকে পুনরায় আটক করতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার একই বিচারক পেনসিলভানিয়ার একটি প্রসেসিং সেন্টার থেকে আব্রেগোকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। আদেশে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে কোনো চূড়ান্ত বহিষ্কার আদেশ নেই এবং এই পরিস্থিতিতে তার অপসারণকে আসন্ন বা যুক্তিসংগত বলা যায় না। বিচারকের লিখিত পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়, এল সালভাদরে ভুলভাবে আটক হওয়ার পর তাকে আবারও কোনো আইনগত ভিত্তি ছাড়াই আটক করা হয়েছিল।
শুক্রবার বিচারক আব্রেগোর আইনজীবীদের আবেদনের পর একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, যাতে শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সরকার তাকে পুনরায় আটক করতে না পারে। একই সঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সরকার যদি ভবিষ্যতে তাকে অন্য কোনো দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়, তবে কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা আগে লিখিতভাবে জানানো বাধ্যতামূলক।
নির্ধারিত চেকইনের আগে আদালত ভবনের বাইরে সমর্থকদের সামনে স্প্যানিশ ভাষায় বক্তব্য দেন আব্রেগো। তিনি বলেন, তিনি নিজেকে একজন মুক্ত মানুষ হিসেবে দেখতে চান এবং মাথা উঁচু করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন। তার বক্তব্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আইনভিত্তিক দেশ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আশা প্রকাশ করেন, এই অবিচার একদিন শেষ হবে।
আইনজীবীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার বিকেলেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং তিনি ডিটেনশন সেন্টার ত্যাগ করেন। পরে তিনি একটি বাসভবনে পৌঁছান, যেখানে গণমাধ্যমের উপস্থিতির মধ্যেও তিনি কোনো বক্তব্য না দিয়ে দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করেন।
মামলার প্রধান আইনজীবী এক বিবৃতিতে বলেন, এই রায় আইনের শাসনের গুরুত্ব নতুন করে প্রমাণ করেছে। তার মতে, সরকার কোনো ব্যক্তিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আইনগত কর্তৃত্ব ছাড়া আটক রাখতে পারে না এবং আদালতের নির্দেশনা মানা এখন সব সংস্থার জন্য বাধ্যতামূলক। তিনি এটিকে অভিযুক্তের জন্য এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করেন, তবে ভবিষ্যতেও সতর্ক থাকার কথা জানান।
অন্যদিকে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এই আদেশের তীব্র সমালোচনা করেছে। বিভাগের এক মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করে বলেন, এটি বিচারিক সক্রিয়তার উদাহরণ এবং এর কোনো বৈধ আইনগত ভিত্তি নেই। বিভাগ আদালতে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
আব্রেগো যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পর তাকে আবার আটক করা হয় এবং একাধিক আফ্রিকান দেশ ও কোস্টারিকায় পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়। তবে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন, সরকার ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দেশের নাম উল্লেখ করলেও সেগুলো বাস্তবে কার্যকর অপশন ছিল না। আদালতের মতে, সরকার আগের এক শুনানিতে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করেছিল।
এই মামলাটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনায় আসে, যখন সরকার স্বীকার করে যে একটি প্রশাসনিক ভুলের কারণে তাকে এল সালভাদরের কুখ্যাত কারাগারে পাঠানো হয়েছিল, যদিও আগের একটি আদালতের আদেশে তাকে সেখানে ফেরত পাঠাতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে একটি কুখ্যাত গ্যাংয়ের সদস্য হওয়ার অভিযোগ আনা হলেও পরিবার ও আইনজীবীরা তা অস্বীকার করেছেন এবং বলেন, তিনি কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত নন।
আদালতের নথি অনুযায়ী, তিনি ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন এবং পারিবারিকভাবে গ্যাং সহিংসতার শিকার হওয়ায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। ২০১৯ সালে একটি ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হলে অভিবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং একজন অভিবাসন বিচারক তাকে নিজ দেশে ফেরত না পাঠানোর আদেশ দেন। তবুও পরবর্তীতে তাকে এল সালভাদরে পাঠানো হয়, যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়।
বর্তমানে আদালতের নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী, তিনি মেরিল্যান্ডে তার ভাইয়ের বাড়িতে অবস্থান করবেন, কাজ খুঁজবেন এবং নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া ভ্রমণ করবেন না। এছাড়া অস্ত্র বহন, অতিরিক্ত মদ্যপান বা মাদক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং একটি চলমান ফেডারেল মামলার শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।



