লস অ্যাঞ্জেলেস ইউনিফায়েড স্কুল ডিস্ট্রিক্টে আগামী দিনগুলোতে বাজেট কাটছাঁট, শিক্ষক ও কর্মী ছাঁটাই এবং একাধিক স্কুল একীভূত বা বন্ধ করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আর্থিক সংকটে থাকা এই বৃহৎ স্কুল জেলা ক্রমেই কমে আসা শিক্ষার্থী সংখ্যা এবং মহামারি পরবর্তী সহায়তা তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার চাপ সামাল দিতে এসব সিদ্ধান্তের পথে হাঁটছে বলে জানিয়েছেন জেলার শীর্ষ এক কর্মকর্তা।
জেলার প্রধান অর্থ কর্মকর্তা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তির ধারাবাহিক পতন এবং কোভিড-১৯ সময়ের এককালীন সহায়তা তহবিল শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যয় কমানোর বিকল্প আর খোলা নেই। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের বাজেট থেকে কতটা কমাতে হবে। এসব কাটছাঁট কার্যকর হবে আগামী আগস্ট থেকে।
এর আগে জুন মাসে জেলা কর্তৃপক্ষ ধারণা করেছিল, ২০২৭-২৮ অর্থবছরে তাদের ঘাটতি দাঁড়াতে পারে প্রায় ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। তবে সম্প্রতি বোর্ড অনুমোদিত সংশোধিত বাজেটে সংরক্ষিত তহবিল ব্যবহার এবং পরবর্তী দুই বছরে নানা ব্যয়সংকোচনের মাধ্যমে এই ঘাটতি সাময়িকভাবে সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জানান, ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্কুল বাজেটে সরাসরি কাটছাঁট শুরু হবে। তার পরের শিক্ষাবর্ষে স্কুল একীভূতকরণ এবং কর্মী সংখ্যা কমানোর মতো বড় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। তিনি বলেন, গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থী সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে, যা রাজ্যভিত্তিক শিক্ষার্থীপ্রতি অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল জেলার জন্য বড় আঘাত।
জেলা কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে, যার কাজ হবে কোন কোন স্কুল বন্ধ বা একীভূত করা যেতে পারে তার মডেল তৈরি করা। যদিও কোন স্কুল কতগুলো বন্ধ হতে পারে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু জানানো হয়নি, তবে পরিসংখ্যান বলছে জেলা দ্রুত সংকুচিত হচ্ছে। ২০০২ সালে যেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৪৬ হাজারের বেশি, সেখানে গত বছর তা নেমে এসেছে প্রায় ৪ লাখ ৮ হাজারে।
বর্তমানে জেলার প্রায় অর্ধেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধারণক্ষমতার অর্ধেকেরও কম শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৫৬টি স্কুলে শিক্ষার্থী কমেছে ৭০ শতাংশ বা তারও বেশি। প্রধান অর্থ কর্মকর্তা বলেন, চলতি শিক্ষাবর্ষে জেলা রাজ্য, স্থানীয় ও ফেডারেল তহবিল থেকে যে অর্থ পাচ্ছে তার চেয়ে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বেশি ব্যয় করছে। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রবণতা আগামী দুই বছরও অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
জুন মাসে বোর্ড অনুমোদিত তিন বছরের বাজেট পরিকল্পনায় চলতি শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ১৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের বাজেট ধরা হয়। সেখানে কিছু ছাঁটাই পরবর্তী বছরের জন্য স্থগিত রাখা হয় এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা তহবিল কমিয়ে বাড়তি ব্যয়ের ব্যবস্থা করা হয়।
সংশোধিত পরিকল্পনা অনুযায়ী জেলা বিভিন্ন খাত থেকে বড় অঙ্কের সাশ্রয় করতে চায়। এর মধ্যে স্কুলগুলোতে অব্যবহৃত তহবিল ফেরত নিয়ে কয়েকশ মিলিয়ন ডলার, কেন্দ্রীয় দপ্তরের কর্মী ও বাজেট কমিয়ে আরও অর্থ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ কমানো, খালি থাকা পদ বাতিল, স্কুল একীভূতকরণ এবং শিক্ষার্থী পরিবহন খাতে কাটছাঁটের পরিকল্পনা রয়েছে।
শিক্ষা অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা এক গবেষক মনে করেন, জেলার সামগ্রিক বাজেটের তুলনায় এই কাটছাঁট তুলনামূলকভাবে সীমিত। তার মতে, বেশিরভাগ স্কুলে এর প্রভাব তেমনভাবে টের পাওয়া যাবে না, তবে যেসব স্কুল বন্ধ হবে বা যেসব পরিবার পরিবহন সুবিধা হারাবে, তাদের জন্য বিষয়টি কঠিন হবে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এই ধরনের অনেক সিদ্ধান্ত একবারই নেওয়া যায়। শিক্ষার্থী সংখ্যা কমতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও বড় আকারের সংকোচন অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। তার মতে, সাম্প্রতিক বাজেট পরিকল্পনা অভিভাবকদের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা যে দীর্ঘদিন অর্থের প্রাচুর্যের পর জেলা এখন ভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি।
এদিকে জেলা বোর্ডের এক সদস্য জানান, বাজেট সংকটের প্রভাব যেন শিক্ষার্থীদের ওপর কম পড়ে, সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। তবে তিনি স্বীকার করেন, কোভিড সহায়তার এককালীন অর্থ দিয়ে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল, যার ফল হিসেবে এখন কিছু কর্মীকে বিদায় জানাতে হতে পারে।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে স্কুলগুলোকে প্রাথমিক বাজেট দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো স্কুলে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাজেট কমানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, ফলে শিক্ষক ও কর্মী রাখার বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে আরও কয়েকশ ছাঁটাইয়ের ঘোষণা আসতে পারে, যদিও ঠিক কতজন এবং কোন কোন পদে, তা এখনো চূড়ান্ত নয়।



