Saturday, December 27, 2025
spot_img
Homeসম্পাদকীয়ট্রাম্পের কৌশলে আমেরিকার নতুন অগ্রাধিকার

ট্রাম্পের কৌশলে আমেরিকার নতুন অগ্রাধিকার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে গণহারে অভিবাসন বন্ধ করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতে, একটি রাষ্ট্র কারা, কতজন এবং কোন অঞ্চল থেকে তাদের সীমান্তে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে, সেই সিদ্ধান্তই ভবিষ্যতে ওই জাতির পরিচয় ও দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করে। এই দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতেই আমেরিকার নতুন কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।

এই কৌশল অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রকে শুধু অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন নয়, বরং সীমান্ত পেরিয়ে আসা সব ধরনের হুমকি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। এর মধ্যে সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার, গুপ্তচরবৃত্তি এবং মানব পাচারের মতো অপরাধকে বড় ধরনের জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সীমান্ত নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করা ছাড়া এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব নয় বলে কৌশলে উল্লেখ করা হয়।

আমেরিকার কৌশলগত অগ্রাধিকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দেশটির নাগরিকদের ঈশ্বরপ্রদত্ত মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ। এই কৌশলে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সরকার কখনোই এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না, যা নাগরিকদের মৌলিক স্বাধীনতা ও অধিকার ক্ষুণ্ন করে। ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার এবং আইনের শাসনকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি হিসেবে ধরে রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

যেসব দেশ এই নীতিমালা অনুসরণ করে বা অনুসরণ করার দাবি করে, তাদের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করার পক্ষে অবস্থান নেবে। মার্কিন নেতৃত্বের মতে, ইউরোপ, অ্যাংলোস্ফিয়ার এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক অঞ্চলে যদি অভিজাত শ্রেণিনির্ভর বা গণতন্ত্রবিরোধী কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র তার বিরোধিতা করবে, বিশেষ করে মিত্র দেশগুলোর ক্ষেত্রে।

এই কৌশলে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আর এককভাবে বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নেবে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত হেগ কমিটমেন্টের মাধ্যমে একটি নতুন বৈশ্বিক মানদণ্ড স্থাপন করা হয়েছে। এর আওতায় ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে নিজেদের মোট দেশজ উৎপাদনের ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার অঙ্গীকার করতে বলা হয়েছে। ন্যাটোর মিত্র দেশগুলো এই প্রতিশ্রুতি সমর্থন করেছে এবং এখন তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তেছে।

শান্তির মাধ্যমে কৌশলগত পুনর্বিন্যাসও আমেরিকার নতুন কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রেসিডেন্টের নির্দেশনায় এমন সব অঞ্চলেও শান্তিচুক্তির উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যেগুলো সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের তাৎক্ষণিক স্বার্থের কেন্দ্রে নেই। এই ধরনের উদ্যোগ বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব শক্তিশালী করতে এবং নতুন বাজার উন্মুক্ত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় মূল সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক তৎপরতা। দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান, প্রাণহানি হ্রাস এবং নতুন মিত্রতা গড়ে ওঠার সুফল তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়ের বিনিময়ে অর্জন করা সম্ভব বলে কৌশলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকেও জাতীয় নিরাপত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক পুনর্গঠন, বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, মার্কিন পণ্যের রপ্তানিতে বাধা দূর করা এবং ডাম্পিংসহ প্রতিযোগিতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড মার্কিন শিল্প ও শ্রমিকদের ক্ষতি করে বলে কৌশলে উল্লেখ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র ন্যায্য ও পারস্পরিক সুবিধাভিত্তিক বাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহী, তবে সবার আগে অগ্রাধিকার পাবে দেশটির শ্রমিক, শিল্পখাত এবং জাতীয় নিরাপত্তা। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পুনঃশিল্পায়ন, প্রতিরক্ষা শিল্পভিত্তি পুনরুজ্জীবন, তেল, গ্যাস, কয়লা ও পারমাণবিক শক্তিতে জ্বালানি আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োজনীয় জ্বালানি উপকরণ দেশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনার কথাও কৌশলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর্থিক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বজায় রাখা ও আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যও এতে অন্তর্ভুক্ত।

সবশেষে প্রেসিডেন্টের বক্তব্য উদ্ধৃত করে কৌশলে বলা হয়েছে, নীতি ও কর্মকাণ্ডের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমেরিকা এবং আমেরিকানদের স্বার্থই সর্বাগ্রে বিবেচিত হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments