২০২৫ সালের বিদায়ী মহাজাগতিক দৃশ্য হিসেবে আজ রাতে আকাশে দেখা যাবে আর্সিড উল্কাবৃষ্টি। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসের শেষভাগে এই উল্কাবৃষ্টি ঘটে এবং এটি মূলত উত্তর গোলার্ধের আকাশপ্রেমীদের জন্যই উপভোগ্য এক বিশেষ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা। আন্তর্জাতিক উল্কা পর্যবেক্ষণ সংস্থার ফায়ারবল রিপোর্ট সমন্বয়কের তথ্যমতে, অনুকূল পরিবেশ থাকলে প্রতি ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০টি উল্কা দেখা যেতে পারে। তবে কখনো কখনো হঠাৎ উজ্জ্বল ফায়ারবলও চোখে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
আর্সিড উল্কাবৃষ্টি সাধারণত শীতকালীন অয়নকালের কাছাকাছি সময়ে সংঘটিত হয়। এই সময় উত্তর গোলার্ধ সূর্য থেকে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করে। এর ফলে রাতের দৈর্ঘ্য বেশি হয় এবং শীতকালীন অয়নকাল বছরের দীর্ঘতম রাত উপহার দেয়। এবছর এই সময় আকাশে একটি সরু ও ক্ষীণ অর্ধচন্দ্রাকৃতি চাঁদ থাকবে, যা দ্রুতই দিগন্তের নিচে নেমে যাবে। ফলে রাতের আকাশ থাকবে তুলনামূলকভাবে অন্ধকার, যা উল্কা দেখার জন্য অত্যন্ত অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে।
এই উল্কাবৃষ্টি কেবল উত্তর গোলার্ধ থেকেই দৃশ্যমান হবে। কারণ, এর রেডিয়েন্ট পয়েন্ট বা যে স্থান থেকে উল্কাগুলো উৎপন্ন হচ্ছে বলে মনে হয়, সেটি দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে পর্যাপ্ত উচ্চতায় ওঠে না। আর্সিড উল্কার রেডিয়েন্ট অবস্থান করছে লিটল ডিপার বা আর্সা মাইনর নক্ষত্রমণ্ডলে। এই অঞ্চলটি উজ্জ্বল কমলা রঙের তারা কোচাবের কাছাকাছি অবস্থিত, যা আকাশে দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজে আসতে পারে।
বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, পৃথিবী যখন ধূমকেতু ৮পি বা টাটলের ফেলে যাওয়া ধূলিকণা ও ক্ষুদ্র ধ্বংসাবশেষের স্তরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে, তখনই আর্সিড উল্কাবৃষ্টি দেখা যায়। এবছর এই উল্কাবৃষ্টি কিছুটা সক্রিয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, পৃথিবী ধূমকেতুর ফেলে যাওয়া একটি ঘন ধ্বংসাবশেষের স্তরের কাছ দিয়ে অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় উল্কার সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে।
টাইম অ্যান্ড ডেটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে আর্সিড উল্কাবৃষ্টি দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো আজ ২২ ডিসেম্বর রাত ১২টার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত। বিশেষ করে ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যবর্তী সময়ে উল্কা দেখার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকবে। এই সময় রেডিয়েন্ট পয়েন্ট আকাশের তুলনামূলক উঁচু অবস্থানে পৌঁছাবে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে উত্তর দিকে মুখ করে তাকালে উল্কাগুলো চোখে পড়তে পারে। আর্সা মাইনর নক্ষত্রমণ্ডলের দিক থেকেই মূলত উল্কাগুলোর উৎপত্তি হতে দেখা যাবে।
চাঁদ রাতের আগেই অস্ত যাবে বলে ক্ষীণ উল্কাগুলোও তুলনামূলকভাবে স্পষ্ট দেখা যেতে পারে। তবে উল্কাবৃষ্টি উপভোগ করতে হলে শহরের তীব্র কৃত্রিম আলো, ধোঁয়াশা ও আলোকদূষণ এড়িয়ে চলাই ভালো। খোলা মাঠ, উঁচু ছাদ বা গ্রামাঞ্চলের অন্ধকার জায়গা এই পর্যবেক্ষণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। চোখকে অন্ধকারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় দেওয়া প্রয়োজন।
ঘণ্টায় গড়ে ৫ থেকে ১০টি উল্কা দেখার সম্ভাবনা থাকলেও ধৈর্য ধরে পর্যবেক্ষণ করলে হঠাৎ করে একাধিক উজ্জ্বল উল্কা বা বড় ফায়ারবল দেখার সৌভাগ্যও হতে পারে। আকাশপ্রেমীদের জন্য এই আর্সিড উল্কাবৃষ্টি বছরের শেষ প্রান্তিকে প্রকৃতির এক অনন্য উপহার, যা রাতের আকাশে এক মুহূর্তের জন্য হলেও সৃষ্টি করবে বিস্ময় ও রোমাঞ্চ।



