নিউইয়র্কে জাতীয় পার্টি যুক্তরাষ্ট্র শাখার উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার জ্যাকসন হাইটস এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে দলীয় নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবাসী সমর্থকেরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি ছিল আলোচনা সভা ও স্মরণানুষ্ঠানভিত্তিক, যেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টি যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি ও দলের কেন্দ্রীয় সদস্য। সভা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শাখার সহ সভাপতি। শুরুতেই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। একই সঙ্গে দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এই পর্বে উপস্থিত সবাই নীরবতার মাধ্যমে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানান।
আলোচনা সভায় যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিজয় দিবস কেবল একটি ঐতিহাসিক দিন নয়, এটি জাতির চেতনা ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রতীক। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি শুরু থেকেই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে অবস্থান নিয়ে রাজনীতি করে আসছে। অতীতের প্রতিটি সরকার যেমন জাতীয় পার্টিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছে, বর্তমান সরকারও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সভায় উপস্থিত সহ সভাপতিরা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, জাতীয় পার্টি একটি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হওয়ায় দলটির বিরুদ্ধে অতীতেও ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং এখনও রয়েছে। তাই দেশের ভেতরে ও বাইরে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তাঁরা। তাঁদের মতে, রাজনৈতিক বাস্তবতায় জাতীয় পার্টির ভূমিকা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধারাও। তাঁরা তাঁদের বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি তুলে ধরেন এবং বলেন, স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে রাজনীতি করাই প্রকৃত দেশপ্রেম। তাঁদের মতে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হলে জাতি পথ হারাবে। তাই রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টির দায়িত্ব হচ্ছে স্বাধীনতার মূল চেতনা ধরে রাখা এবং তা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও সভায় বক্তব্য রাখেন। কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এক সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রবাসে বসবাস করলেও দেশের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, প্রবাসী নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা আগামী দিনে দলকে আরও শক্তিশালী করবে। কৃষি বিষয়ক সম্পাদকসহ অন্যান্য বক্তারা বলেন, জাতীয় পার্টি সবসময় কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের স্বার্থে কথা বলে এসেছে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন চিকিৎসক, সমাজকর্মী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা। একজন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী তাঁর বক্তব্যে বলেন, সংস্কৃতি ও রাজনীতি একে অপরের পরিপূরক। বিজয় দিবসের মতো দিনে সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা জরুরি।
বক্তারা একমত পোষণ করে বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে দলীয় নেতাকর্মীদের আরও সক্রিয় হতে হবে। তাঁরা আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীকে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। সভার শেষাংশে দলীয় ঐক্য, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলন জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।



