Sunday, December 21, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যনতুন তোশাখানা রায়ে উত্তাল পাকিস্তান রাজনীতি

নতুন তোশাখানা রায়ে উত্তাল পাকিস্তান রাজনীতি

নতুন তোশাখানা মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডের রায়ের পর পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবারও উত্তাপ ছড়িয়েছে। এই রায়ের প্রতিবাদে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও একটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান দেশব্যাপী আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ইসলামাবাদ হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর দল মনে করছে, এই রায় শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে নয়, বরং দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের বিরুদ্ধেও একটি বার্তা বহন করছে।

শনিবার পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির একটি বিশেষ আদালত তোশাখানা সংক্রান্ত নতুন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রীকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেন। আদালতের এই রায় ঘোষণার পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। কারাবন্দী থাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সুযোগ নেই। তবে তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে দেশজুড়ে আন্দোলনের প্রস্তুতির নির্দেশনা উঠে আসে।

ওই বিবৃতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রীকে রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য পুরো জাতিকে জেগে উঠতে হবে। তিনি জানান, এই রায়ে তিনি বিস্মিত নন। বরং তিনি আগেই ধারণা করেছিলেন যে এমন একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তাই তাঁর আইনি দলকে দ্রুত হাইকোর্টে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, গত তিন বছরে তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া বিভিন্ন মামলার রায়ের মতো এটিও ভিত্তিহীন ও পূর্বপরিকল্পিত। তাঁর দাবি, কোনো শক্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই এবং তাঁর আইনজীবীদের বক্তব্য না শুনেই দ্রুত রায় ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি সংবিধান রক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আইনজীবী সমাজকে রাজপথে নামার আহ্বান জানান।

এদিকে তাঁর দল এক বিবৃতিতে এই রায়কে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নিকৃষ্ট উদাহরণ বলে আখ্যায়িত করেছে। দলটির মতে, এই মামলার উদ্দেশ্য হলো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কারাবাসের মেয়াদ আরও দীর্ঘ করা এবং বর্তমান সরকারকে সন্তুষ্ট রাখা। দলীয় নেতারা দাবি করেন, পুরো বিচারপ্রক্রিয়া অসাংবিধানিক এবং এটি একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য সামনে রেখে পরিচালিত হয়েছে।

দলের সাধারণ সম্পাদক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন এবং তিনি কোনো পরিস্থিতিতেই ক্ষমা চাইবেন না। তাঁর মতে, মামলাটি অত্যন্ত দুর্বল সাক্ষ্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং এটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে সাজানো হয়েছে। একই সুরে দলের অন্য দুই শীর্ষ নেতা বলেন, বর্তমানে শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক পন্থায় প্রতিরোধ গড়ে তোলাই একমাত্র পথ। তাঁরা সংশ্লিষ্ট আদালতকে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বলে অভিহিত করেন।

এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বোন এই রায়কে একটি পূর্বলিখিত চিত্রনাট্যের বাস্তবায়ন বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে দলের আরেক শীর্ষ নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, পাকিস্তানে এখন আর আইনের শাসন নেই। তাঁর ভাষায়, পুরো বিচারব্যবস্থা একটি প্রহসনে পরিণত হয়েছে।

এই মামলার মূল বিষয়বস্তু একটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ব্র্যান্ডের একটি মূল্যবান জুয়েলারি সেট। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২১ সালের মে মাসে সৌদি আরবে সরকারি সফরের সময় পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ওই উপহারটি পান। পরে নামমাত্র মূল্যে সেটি নিজের কাছে রেখে দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, মাত্র ২৯ লাখ রুপির বিনিময়ে সেটিটি নেওয়া হয়, যদিও এর বাজারমূল্য প্রায় ৮ কোটি রুপি।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলোর আনা অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান। এরপর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা সামনে আসে। নতুন তোশাখানা মামলার এই রায় সেই ধারাবাহিকতারই একটি অংশ হিসেবে দেখছেন তাঁর সমর্থকরা। ফলে এই রায় ঘিরে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে উঠেছে এবং সামনের দিনগুলোতে এর প্রভাব আরও গভীর হতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments