ভিয়েতনামে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস ২০২৫ উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য ও মর্যাদাপূর্ণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এ সময় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালিত হয়। পাশাপাশি মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার পক্ষ থেকে প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়, যা অনুষ্ঠানের আবহকে আরও গম্ভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।
দিনের কর্মসূচির চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয় সন্ধ্যায় ভিয়েতনামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সরকারি বাসভবনে। বিজয় দিবস উপলক্ষে বাসভবনটি ব্যানার, ফেস্টুন, ফুল ও রঙিন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। পুরো পরিবেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের গৌরবময় চেতনার প্রতিফলন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই আয়োজনে ভিয়েতনামে বসবাসরত বিভিন্ন পেশার প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক, হ্যানয়ে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, ভিয়েতনামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, স্থানীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারবর্গ অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে একটি আলোচনা সভা এবং একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ভিয়েতনামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। বক্তব্যের শুরুতে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিত্বদের, অসংখ্য শহিদ, সম্ভ্রম হারানো মা-বোন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একই সঙ্গে তিনি ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহিদদের প্রতিও সম্মান জানান।
আলোচনায় তিনি উপস্থিত সকলকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে অর্জিত বিজয় বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের সর্ববৃহৎ অর্জন। এই বিজয়ের চেতনাই দেশের সকল উন্নয়ন ও অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে। তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্ববাজারে পোশাক শিল্পে নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বাধিক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বর্তমানে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রশক্তিতে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ২০২৪ সালের গণআকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে আগামী দিনগুলোতে সবাইকে নতুন উদ্যমে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
সাংস্কৃতিক পর্বে ভিয়েতনামের একদল শিশু বিজয় দিবসের গান পরিবেশন করে দলীয় নৃত্য উপস্থাপন করে, যা উপস্থিত দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিজয়ের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে কবিতা আবৃত্তি করেন। দূতাবাসের আয়োজনে বিভিন্ন খেলাধুলার প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উৎসাহ ও আনন্দের পরিবেশ লক্ষ করা যায়।
সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া পর্ব শেষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরো অনুষ্ঠানটি সুশৃঙ্খলভাবে সঞ্চালনা করেন দূতালয় প্রধান। সার্বিকভাবে ভিয়েতনামে মহান বিজয় দিবসের এই আয়োজন প্রবাসে থেকেও বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্বাধীনতার চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে।



