Sunday, December 21, 2025
spot_img
Homeইমিগ্রেশন তথ্যমৃত্যুর পর এল অভিবাসন অনুমোদন চিঠি

মৃত্যুর পর এল অভিবাসন অনুমোদন চিঠি

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের এক প্রবাসী নারীর জীবনে আনন্দের যে মুহূর্তটি আসার কথা ছিল, সেটিই পরিণত হয়েছে গভীর বেদনায়। স্বামীর মৃত্যুর দুই মাস পর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুমোদনপত্র এসে পৌঁছায় তার হাতে। যে চিঠিটি স্বামীর জন্য অপেক্ষার অবসান ঘটানোর কথা ছিল, সেটিই এখন তার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের স্মারক হয়ে উঠেছে।

চিঠিটি পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস। এতে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসের প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপে এগোনোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই অনুমোদনের মাধ্যমে ভিসা বা গ্রিন কার্ড পাওয়ার আবেদন শুরু করার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই চিঠি যাঁর নামে পাঠানো হয়েছিল, তিনি আর বেঁচে নেই।

৩১ বছর বয়সী ওই মেক্সিকান নাগরিক দুই মাস আগে ডালাসের একটি আইসিই আটক কেন্দ্রে গুলিবর্ষণের ঘটনায় নিহত হন। তিনি তখন ফেডারেল হেফাজতে ছিলেন। একটি ছাদ থেকে চালানো স্নাইপার হামলায় তাঁর সঙ্গে আরেকজন আটক ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই মারা যান। এই ঘটনার পর থেকেই পরিবারটির জীবন পুরোপুরি পাল্টে যায়।

নিহতের স্ত্রী জানান, স্বামীর অনুপস্থিতি তাদের বাড়ির প্রতিটি কোণে অনুভূত হয়। আরলিংটনের যে বাড়িটি তারা চলতি বছরের মে মাসে কিনেছিলেন, সেটির গ্যারেজ থেকে শুরু করে ঘরের ভেতরের সাজসজ্জা সবকিছুই এখন স্মৃতির ভারে ভরা। এমনকি তাদের সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানও প্রতিনিয়ত স্বামীর কথা মনে করিয়ে দেয়। স্বামীর মৃত্যুর পরই তিনি তাদের পঞ্চম সন্তানের জন্ম দেন।

সোমবার ডাকযোগে আসা চিঠিটি খুলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। চিঠিতে বড় অক্ষরে লেখা ছিল অনুমোদনের খবর। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার ফলাফল দেখেও তিনি আনন্দ অনুভব করতে পারেননি। কারণ যাঁর জন্য এই সুখবর, তিনি তা দেখার সুযোগ পাননি।

নিহতের স্ত্রী জানান, তাঁর স্বামী বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। প্রায় দুই বছর ধরে তারা এই অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিলেন। এই কাগজপত্র তাদের পরিবারের জন্য শুধু একটি আইনি স্বীকৃতি নয়, বরং অনিশ্চয়তা ও বহিষ্কারের ভয় থেকে মুক্তির আশ্বাস ছিল।

বিশেষ করে বড়দিনের ঠিক আগে এই চিঠি আসায় কষ্ট আরও বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি। তাঁর ভাষায়, স্বামী বেঁচে থাকলে এই সময়টা তাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারত। কিন্তু বাস্তবতা এখন ঠিক উল্টো।

গত আগস্টে তিনি আরলিংটনে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। পরে সেপ্টেম্বর মাসে ডালাসের আইসিই আটক কেন্দ্রে থাকার সময় ওই মর্মান্তিক হামলার শিকার হন। এই ঘটনার পর থেকে পরিবারটি শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, যদিও সেই ক্ষতি কখনো পূরণ হওয়ার নয় বলে জানান নিহতের স্ত্রী।

তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, স্বামীর মৃত্যুর দুই মাস পর কেন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি পাঠানো হলো। চিঠিটির তারিখ ছিল ৯ ডিসেম্বর, যা তাকে আরও হতবাক করেছে। তাঁর মতে, এই অনুমোদনের খবর স্বামী পেলে নিঃসন্দেহে অত্যন্ত খুশি হতেন।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসের কাছে মন্তব্য চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থা ও আটক কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

এই পরিবারের জন্য অনুমোদনের চিঠিটি এখন আর আইনি সাফল্যের দলিল নয়, বরং হারানো স্বপ্ন ও অপূর্ণ অপেক্ষার প্রতীক হয়ে রয়ে গেছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments