যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএ সানস্ক্রিনে একটি নতুন সক্রিয় উপাদান ব্যবহারের অনুমোদনের প্রস্তাব দিয়েছে। এই উপাদানটি ইতোমধ্যে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাজারজাত সানস্ক্রিনে উপাদানটির ব্যবহার আইনি স্বীকৃতি পাবে।
প্রস্তাবিত উপাদানটির নাম বেমোট্রিজিনল। এটি এমন একটি রাসায়নিক যৌগ, যা সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে বিস্তৃত সুরক্ষা প্রদান করে। বিশেষ করে এটি ইউভিএ ও ইউভিবি দুই ধরনের রশ্মির বিরুদ্ধেই কার্যকর। এফডিএ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এই উপাদানটি ত্বকের মাধ্যমে শরীরে খুব অল্পমাত্রায় শোষিত হয় এবং সাধারণত ত্বকে জ্বালা বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে একে নিরাপদ ও কার্যকর সানস্ক্রিন উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সানস্ক্রিনের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব এফডিএর। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সানস্ক্রিন বাজারে আনতে হলে ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হয় কোন শর্তে এবং কীভাবে কোনো পণ্যকে নির্দিষ্ট ব্যবহারের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এই কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সক্রিয় উপাদান শনাক্ত করা এবং তার বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন করা।
এফডিএ জানিয়েছে, সুইজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসভিত্তিক একটি পুষ্টি ও রাসায়নিক পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তাদের পক্ষ থেকে আবেদন করেছে, যাতে বেমোট্রিজিনলকে যুক্তরাষ্ট্রে সানস্ক্রিনে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত সক্রিয় উপাদানের তালিকায় যুক্ত করা হয়। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এফডিএ বিষয়টি জনসাধারণের মতামতের জন্য উন্মুক্ত করেছে। একই সঙ্গে সংস্থাটি নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য নিজস্ব মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শুরু করবে। সব দিক পর্যালোচনা শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এফডিএর ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক শীর্ষ কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে বলেন, বেমোট্রিজিনল যুক্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারা সানস্ক্রিনের ক্ষেত্রে আরও একটি কার্যকর বিকল্প পাবেন। বর্তমানে বাজারে থাকা উপাদানগুলোর সঙ্গে এটি যুক্ত হলে সূর্য সুরক্ষার পরিসর আরও বিস্তৃত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ত্বক ক্যানসারের প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে আসা। এই রশ্মি শুধু সূর্য থেকেই নয়, ট্যানিং বেড বা সান ল্যাম্প থেকেও আসে। ত্বক সুরক্ষার জন্য ছায়ায় থাকা, ইউভি প্রতিরোধী পোশাক পরা, টুপি ও সানগ্লাস ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব ব্যবস্থার পাশাপাশি সানস্ক্রিন ত্বক সুরক্ষার একটি অপরিহার্য উপায়।
সানস্ক্রিন মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো রাসায়নিক সানস্ক্রিন এবং অন্যটি খনিজ সানস্ক্রিন। রাসায়নিক সানস্ক্রিন ত্বকের ওপরের স্তরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অতিবেগুনি রশ্মিকে তাপে রূপান্তর করে, যা পরে ছড়িয়ে যায়। এই ধরনের সানস্ক্রিনে বর্তমানে বিভিন্ন সক্রিয় উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে খনিজ সানস্ক্রিন ত্বকের ওপর একটি সুরক্ষা স্তর তৈরি করে, যা সূর্যের রশ্মিকে প্রতিফলিত করে দেয়। উভয় ধরনের সানস্ক্রিনই ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বেমোট্রিজিনল যুক্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রে সানস্ক্রিনের মান ও কার্যকারিতা আরও উন্নত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে এফডিএর পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন ও জনমত গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন।



