গাজায় সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীতে আত্মহত্যার ঘটনা ক্রমেই উদ্বেগজনক আকার ধারণ করছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের অন্তত ৬১ জন সেনাসদস্য আত্মহত্যা করেছেন। দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত একটি সামরিক ঘাঁটিতে। সেখানে দায়িত্ব পালনরত একজন সক্রিয় সেনাসদস্য নিজের জীবন শেষ করেছেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সেনা বাহিনীর ভেতরে ‘ট্র্যাকার’ হিসেবে কাজ করতেন। গত মঙ্গলবার তিনি নিজের শরীরে গুলি চালান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেদিন সন্ধ্যায় চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনার কিছু সময় আগে ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, উত্তর ইসরায়েলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক সেনা গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার প্রকৃত কারণ ও প্রেক্ষাপট জানতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।
গাজায় চলমান সামরিক অভিযানের পর থেকে ইসরায়েলি সেনাদের মানসিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। তবে আত্মহত্যার সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তা দেশটির সমাজ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভেতর গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। হারেৎজের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে আত্মহত্যাকারী ৬১ জন সেনাসদস্যের প্রতিটি ঘটনাই আলাদাভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আরও প্রাসঙ্গিক তথ্য উঠে এসেছে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের গবেষণা ও তথ্যকেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে। চলতি বছরের ২৮ অক্টোবর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের শুরু থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত সময়ে ইসরায়েলি বাহিনীর মোট ২৭৯ জন সেনাসদস্য আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি সাতজন সেনার আত্মহত্যা প্রচেষ্টার বিপরীতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
গবেষণা ও তথ্যকেন্দ্রের প্রতিবেদনে এই প্রবণতাকে অত্যন্ত গুরুতর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও প্রতিবেদনে আত্মহত্যার পেছনের নির্দিষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি, তবে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ পরিস্থিতি, দায়িত্ব পালনের চাপ এবং মানসিক অবসাদকে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।
সামরিক বাহিনীর ভেতরে আত্মহত্যার ঘটনাগুলো সাধারণত স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচিত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয় না। তবুও সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, গাজা অভিযান শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।
উত্তর ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিতে সর্বশেষ আত্মহত্যার ঘটনাটি সেই ধারাবাহিকতারই অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে কী তথ্য বেরিয়ে আসে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি। তবে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও স্পষ্ট হলো যে, গাজা যুদ্ধ শুধু মাঠের লড়াইয়েই সীমাবদ্ধ নয়, এর প্রভাব সেনাদের ব্যক্তিগত জীবন ও মানসিক অবস্থার ওপরও গভীরভাবে পড়ছে।
ক্রমবর্ধমান এই আত্মহত্যার সংখ্যা ইসরায়েলি সমাজে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে সেনাদের মানসিক সুরক্ষা ও সহায়তা ব্যবস্থা নিয়ে। গাজায় সামরিক অভিযান যত দীর্ঘ হচ্ছে, ততই এই ধরনের ট্র্যাজেডির আশঙ্কা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকেরা।



