Sunday, December 21, 2025
spot_img
Homeএডুকেশনউচ্চশিক্ষার নতুন হটস্পট দুবাই কেন

উচ্চশিক্ষার নতুন হটস্পট দুবাই কেন

দুবাই আন্তর্জাতিক একাডেমিক সিটির কোনো কফি শপে সকালবেলা পা রাখলেই চোখে পড়ে এক বৈচিত্র্যময় দৃশ্য। চারপাশে ভেসে আসে আরবি, হিন্দি, রুশ কিংবা সোয়াহিলির মতো নানা ভাষার কথোপকথন। টেবিলজুড়ে খোলা ল্যাপটপে লিংকডইন প্রোফাইল, গবেষণাপত্র কিংবা নতুন স্টার্টআপ ভাবনার নোট। এই পরিবেশ এখন আর কেবল ক্ষণিকের যাত্রাবিরতির শহরের পরিচয় বহন করে না। বহু শিক্ষার্থীর কাছে দুবাই হয়ে উঠেছে উচ্চশিক্ষা, ক্যারিয়ার শুরু এবং দীর্ঘমেয়াদে বসবাসের সম্ভাবনাময় ঠিকানা।

শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, বদলাচ্ছে প্রবণতা

সর্বশেষ শিক্ষাবর্ষে দুবাইয়ের ৪১টি বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে ৪২ হাজার ২৬ জন বিদেশি শিক্ষার্থী। আগের বছরের তুলনায় মোট ভর্তি বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে আরও দ্রুত, প্রায় ২৯ শতাংশ, যা বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এই ধারা বজায় থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় মোট ভর্তি ৪০ শতাংশেরও বেশি বাড়তে পারে।

ভারত ও আফ্রিকার শিক্ষার্থীদের আগ্রহ

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশই ভারত থেকে আসা। তাঁদের বড় অংশ ব্যবসা ও প্রযুক্তিভিত্তিক বিষয়ে অধ্যয়ন করছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো ঐতিহ্যবাহী গন্তব্যের পরিবর্তে অনেক শিক্ষার্থী এখন দুবাইকেই বেছে নিচ্ছেন। স্বল্প ফ্লাইট সময়, সাংস্কৃতিক পরিচিতি, তুলনামূলক সহজ ভিসা ব্যবস্থা এবং পড়াশোনা শেষে আঞ্চলিক অর্থনীতিতে দ্রুত কাজের সুযোগ এই সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রাখছে।

বিশ্বমানের ক্যাম্পাসের সমাহার

এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমিরাতে শাখা ক্যাম্পাস স্থাপন করছে। শুধু দুবাইতেই রয়েছে বহু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস। বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিং, কর্মসংস্থান উপযোগী শিক্ষা এবং প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড মূল্যকে সামনে রেখে এসব ক্যাম্পাস শিক্ষার্থী আকর্ষণ করছে। আবুধাবি ও শারজার মতো অন্যান্য আমিরাতও ধীরে ধীরে উচ্চশিক্ষার নতুন গন্তব্য হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে।

২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে আরও তিনটি বিশ্বস্বীকৃত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুবাইয়ে কার্যক্রম শুরু করবে। এর মধ্যে ভারতের একটি শীর্ষ ব্যবস্থাপনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। পাশাপাশি ২৫টি নতুন স্কুল, নার্সারি ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা হাজার হাজার নতুন শিক্ষার্থীর জন্য সুযোগ তৈরি করবে। সাম্প্রতিক আরেকটি বড় উদ্যোগ হলো দুবাই ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা, যেখানে প্রায় ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন দিরহাম বিনিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষাকে ঘিরে অর্থনৈতিক রূপকল্প

দুবাই ইকোনমিক এজেন্ডা ডি৩৩-এর লক্ষ্য ২০৩৩ সালের মধ্যে শহরের অর্থনীতি দ্বিগুণ করা এবং বিশ্বে বসবাস, কাজ ও বিনিয়োগের জন্য শীর্ষ তিন শহরের একটি হওয়া। এই লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০২৪ সালে চালু হওয়া এডুকেশন ৩৩ কৌশলের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিকতা থেকে সরিয়ে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো জীবনের প্রতিটি ধাপে বৈশ্বিক বাজারে টিকে থাকার মতো দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করা। নীতিনির্ধারকদের লক্ষ্য, প্রায় ৯০ শতাংশ গ্র্যাজুয়েটকে কর্মসংস্থানের আওতায় আনা।

ভিসা সংস্কার ও প্রতিভা ধরে রাখার উদ্যোগ

শিক্ষা খাতের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে ভিসা ব্যবস্থাতেও এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। ২০২২ সালে চালু হওয়া পাঁচ বছরের গ্রিন ভিসা উচ্চ দক্ষ পেশাজীবী, সৃজনশীল ফ্রিল্যান্সার এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য স্পনসরনির্ভরতার বাইরে স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি এবং স্কলারশিপ সুবিধাও সম্প্রসারিত হয়েছে। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে দুই শতাধিক কৃতী শিক্ষাবিদকে গোল্ডেন ভিসা দেওয়ার উদ্যোগ এই প্রতিশ্রুতিরই অংশ, যার লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদে সেরা মেধা ধরে রাখা।

ক্যারিয়ার শুরুর প্ল্যাটফর্ম

দুবাই এখন শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়, বরং ক্যারিয়ার শুরু করার কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও পরিচিত হচ্ছে। নতুন দুবাই ইউনিফায়েড লাইসেন্স ব্যবস্থায় মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে ব্যবসার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব হচ্ছে, যেখানে আগে সময় লাগত প্রায় ৬৫ দিন। এই ধরনের প্রশাসনিক সহজীকরণ একজন গ্র্যাজুয়েটের শিক্ষাজীবনের প্রকল্পকে দ্রুত বাস্তব ব্যবসায় রূপ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করছে।

উজ্জ্বলতার আড়ালে চ্যালেঞ্জ

তবে সবকিছুর মাঝেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, বাড়িভাড়া ও মাসিক খরচ শিক্ষার্থীদের জন্য চাপ তৈরি করছে। তবুও বৈশ্বিক স্বপ্ন দেখা তরুণদের কাছে লেকচার হল থেকে ইন্টার্নশিপ, সেখান থেকে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, কনসালট্যান্সি বা মিডিয়া হাউসে চাকরির সম্ভাবনা দিন দিন আরও বাস্তব হয়ে উঠছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments