Sunday, December 21, 2025
spot_img
Homeসম্পাদকীয়অনলাইন জন্মপরামর্শের ঝুঁকি ও বাস্তবতা

অনলাইন জন্মপরামর্শের ঝুঁকি ও বাস্তবতা

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও অনেক মানুষ এখনো বিকল্প বা তথাকথিত প্রাকৃতিক চিকিৎসা ও চর্চার প্রতি আকৃষ্ট হন। এসব পদ্ধতির অনেকগুলো ক্ষতিকর নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ক্যানসার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত এক বিশেষজ্ঞ আগেই উল্লেখ করেছিলেন যে, চিকিৎসাধীন অনেক রোগী ধ্যান, ভিটামিন বা অনুরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করেন। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত চিকিৎসার পাশাপাশি এসব পদ্ধতি গ্রহণ করলে সাধারণত সমস্যা হয় না। বরং মানসিক চাপ কমলে রোগীর উপকারও হতে পারে।

কিন্তু অনলাইন স্বাস্থ্য ইনফ্লুয়েন্সারদের বিস্তার এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বহু দেশের সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখনো পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারেনি। একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে ফ্রি বার্থ সোসাইটি নামের একটি সংগঠনের কার্যক্রম সামনে এসেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য সদস্যপদভিত্তিক পরামর্শ দেয় এবং তথাকথিত জন্ম সহায়তাকারী বা বার্থ কিপার প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অন্তত ৪৮টি দেরিতে মৃতভ্রূণ জন্ম বা গুরুতর ক্ষতির ঘটনা রয়েছে, যেখানে সংশ্লিষ্ট মা বা জন্ম সহায়তাকারীরা এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনায় ভিত্তি থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃত। যুক্তরাজ্যে সম্প্রতি জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ তাদের একটি ওয়েবপেজ সরিয়ে নেয়, যেখানে একটি দাতব্য সংস্থার তথ্যে এই সংগঠনের উপকরণ ব্যবহারের সুপারিশ ছিল।

চিকিৎসা সহায়তা ছাড়া সন্তান জন্ম দেওয়া বা ফ্রি বার্থ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে আইনত বৈধ। তবে এ পদ্ধতির ঝুঁকি সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। মিডওয়াইফারি বিষয়ের একজন অধ্যাপক জানিয়েছেন, সামগ্রিকভাবে দেখা যায় পেশাদার সহায়তা ছাড়া প্রসব ও সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে মা ও শিশুর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।

সন্তান জন্ম দেওয়া অনেক নারীর জন্যই ভয়ের অভিজ্ঞতা হতে পারে। সব জায়গায় মানসম্মত সেবা নিশ্চিত হয় না। ইংল্যান্ডে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মাতৃসেবা ইউনিট অনিরাপদ অথবা উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান জন্মের খরচ ব্যক্তিগতভাবে, বীমা বা সরকারি সহায়তার মাধ্যমে বহন করতে হয়। ফলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও মাতৃসেবার দীর্ঘদিনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে সমালোচনা অনেক ক্ষেত্রে যৌক্তিক। অনুসন্ধানে অংশ নেওয়া বহু নারী জানিয়েছেন, তাঁদের আগের প্রসব অভিজ্ঞতা ছিল মানসিকভাবে আঘাতজনক।

তবে প্রতিষ্ঠানগত অবিশ্বাস বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি হলেও এটি অনেক সময় বিকল্প ধারার ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়। তারা প্রচলিত চিকিৎসার বাইরে নিজস্ব পদ্ধতি ও আত্মনির্ভরশীলতার ধারণা ছড়িয়ে দেন। মহামারির সময় তথাকথিত ওয়েলনেস শিল্পের একটি অংশ টিকা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো এবং সরকারি নির্দেশনা সম্পর্কে সন্দেহ তৈরিতে ভূমিকা রেখেছিল। সাম্প্রতিক এক ক্যানসার সম্মেলনে উপস্থাপিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, গত এক দশকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ভ্রান্ত তথ্যের বিস্তার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ফ্রি বার্থ সোসাইটি সংক্রান্ত অনুসন্ধানেও দেখা যায়, বাহ্যিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি নিজেকে প্রতিষ্ঠাবিরোধী এক ধরনের বোনত্বের নেটওয়ার্ক হিসেবে তুলে ধরলেও বাস্তবে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাব বিস্তারকারী প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি নিজেকে কোনো স্বীকৃত চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী হিসেবে দাবি করে না।

বর্তমান যুগে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ছিল এমন সময়ে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিপুল পরিমাণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা এখন অনলাইনে সহজলভ্য, যা অনেকেই সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন। তবে ভুল ও বিভ্রান্তিকর পরামর্শ থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থাও জরুরি। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবহৃত অ্যালগরিদম যে চরম ও বিতর্কিত কনটেন্টকে বেশি গুরুত্ব দেয়, তা সুপরিচিত।

যুক্তরাজ্যে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার মাতৃসেবা উন্নয়ন জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন। এর মধ্যে বাড়িতে সন্তান জন্মের বিকল্প ব্যবস্থা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। একই সঙ্গে সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত তথ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কার্যকর কৌশল তৈরি করা, যাতে প্রমাণভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা ভ্রান্ত তথ্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments