যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে একজন অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের বিচারকের বিরুদ্ধে অভিবাসন সংক্রান্ত একটি ঘটনায় বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অভিযোগ, ফেডারেল কর্তৃপক্ষ যখন একজন অভিবাসীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছিল, তখন ওই বিচারক তাকে আদালতের ভেতর থেকে গোপনে বেরিয়ে যেতে সহায়তা করেন। এ ঘটনায় বিচারককে অবরোধ সৃষ্টি ও গোপন করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে সর্বোচ্চ ছয় বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে।
সোমবার আদালতে শুনানির শুরুতে সরকারি কৌঁসুলি জুরিদের জানান, অভিযুক্ত বিচারক আদালতকক্ষের একটি ব্যক্তিগত দরজা ব্যবহার করে ওই অভিবাসীকে দ্রুত বেরিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। এ সময় ফেডারেল অভিবাসন কর্মকর্তারা আদালত ভবনের ভেতরেই তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছিলেন। কৌঁসুলির বক্তব্য অনুযায়ী, বিচারক তখন মন্তব্য করেছিলেন যে এ সিদ্ধান্তের দায় তিনি নিজেই নেবেন।
এই মামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থার জন্য একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাধারণত কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে এ ধরনের ফৌজদারি অভিযোগে বিচার শুরু হওয়া বিরল। সংশ্লিষ্ট বিচারক মিলওয়াকি কাউন্টির সার্কিট কোর্টে দায়িত্ব পালন করতেন এবং চলতি বছরের বসন্তে তৎকালীন প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রেক্ষাপটে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়।
মামলার কেন্দ্রে রয়েছে ৩১ বছর বয়সী এক অভিবাসীর আদালতে উপস্থিতি। ওই ব্যক্তি এপ্রিল মাসে একটি অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের অপরাধ মামলার শুনানির জন্য কাউন্টি কোর্টহাউসে হাজির হন। অভিযোগ অনুযায়ী, বিচারক প্রথমে ফেডারেল অভিবাসন কর্মকর্তাদের প্রধান বিচারকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এরপর তিনি অভিযুক্ত অভিবাসীকে আদালতকক্ষের পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দেন, যা একটি সাধারণ করিডরের দিকে খোলে।
সরকারি কৌঁসুলি আদালতে বলেন, গ্রেপ্তারকারী দলটি কখনো কল্পনাও করেনি যে আইন রক্ষার শপথ নেওয়া একজন বিচারক তাদের অভিযানকে এভাবে বিভক্ত করে দেবে এবং দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করবে। তিনি আরও জানান, বিচারক তাঁর আদালত প্রতিবেদককে বলেছিলেন যে তিনি এ ঘটনার দায় নিজে বহন করবেন।
সরকারপক্ষ জানিয়েছে, তাদের মামলার উপস্থাপন কয়েক দিন ধরে চলবে এবং প্রায় দুই ডজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিচারককে প্রতিটি অভিযোগে আলাদা আলাদা শাস্তির মুখোমুখি হতে হতে পারে, যা মিলিয়ে ছয় বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
অন্যদিকে, প্রতিরক্ষাপক্ষের আইনজীবী তাঁর প্রারম্ভিক বক্তব্যে বলেন, বিচারকের কোনোভাবেই ফেডারেল কর্তৃপক্ষকে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল না। তাঁর দাবি, আদালতের প্রচলিত নীতিমালা অনুসরণ করেই বিচারক অভিবাসন কর্মকর্তাদের প্রধান বিচারকের দপ্তরে যেতে বলেন। তিনি আরও বলেন, করিডরে থাকা অন্য কর্মকর্তারা চাইলে তখনই গ্রেপ্তার করতে পারতেন, কিন্তু তারা তা না করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বাইরে অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রতিরক্ষাপক্ষের মতে, ঘটনার পরবর্তী সময়ে সব দায় ওই বিচারকের ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ওই অভিবাসীকে আদালত ভবনের বাইরে একটি ধাওয়া শেষে গ্রেপ্তার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ জানিয়েছে, পরে তিনি স্থানীয় মামলায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে দোষ স্বীকারের সমতুল্য অবস্থান নেন এবং সাজা ভোগের পর তাঁকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বিচার শুরুর আগে ফেডারেল জেলা আদালতের একজন বিচারক অভিযোগ খারিজের আবেদন নাকচ করে দেন। তাঁর মতে, এই ক্ষেত্রে অভিযুক্ত বিচারকের জন্য কোনো সুপ্রতিষ্ঠিত দায়মুক্তি প্রযোজ্য নয়।
এই মামলাকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনেও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, তৎকালীন প্রশাসন বিচার বিভাগের অভিবাসন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা দমনে এই মামলাকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। অভিযুক্ত বিচারক পুলিশকে জানিয়েছেন, এই ঘটনার পর তাঁর পরিবার হুমকিসূচক লিফলেট পেয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে একজন সক্রিয়তাবাদী বিচারক হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, ক্ষমতাসীন দলের এক কংগ্রেস সদস্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর মন্তব্য করেছেন, যা বিতর্ক আরও উসকে দিয়েছে।



