যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নতুন করে কঠোর তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশটিতে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক ভ্রমণকারীদের এখন থেকে আগের তুলনায় অনেক বেশি ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে হবে। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের কার্যক্রম, ইমেইল ব্যবহারের ইতিহাস এবং পারিবারিক পটভূমি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে গত পাঁচ বছরে সংরক্ষিত ডেটাও বিশ্লেষণের আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ফেডারেল রেজিস্টারে ১০ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি নোটিশ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন বিভাগ ভিসা-মুক্ত কয়েকটি দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যমসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের প্রস্তাব দিয়েছে। এই উদ্যোগ মূলত ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী ভ্রমণকারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের মাধ্যমে যেসব ভ্রমণকারী ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথরাইজেশন ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রেই এই নতুন নিয়ম কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই ব্যবস্থার আওতায় যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কাতার, গ্রিস, মাল্টা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ইসরায়েল ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ মোট ৪২টি দেশের নাগরিক পর্যটন বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ ৯০ দিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করতে পারেন।
বর্তমানে ইএসটিএ পদ্ধতিতে আবেদনকারীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই করা হয় এবং সাধারণ ভিসা আবেদনের মতো দূতাবাস বা কনস্যুলেটে সরাসরি সাক্ষাৎকার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে বিদ্যমান নিয়মেও আবেদনকারীদের কিছু নির্দিষ্ট তথ্য দিতে হয়। এর মধ্যে পিতামাতার নাম, বর্তমান ইমেইল ঠিকানা এবং অতীতে কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড থাকলে তার বিবরণ অন্তর্ভুক্ত।
২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো ইএসটিএ আবেদনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য দেওয়ার বিষয়ে একটি প্রশ্ন যুক্ত করা হয়েছিল। সে সময় বিষয়টি ঐচ্ছিক ছিল। নতুন প্রস্তাবনায় সেই পরিসর আরও বিস্তৃত করা হচ্ছে।
নতুন নোটিশ অনুযায়ী, কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন বিভাগ ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে চায়। এর মধ্যে রয়েছে গত পাঁচ বছরে ব্যবহৃত টেলিফোন নম্বর এবং গত ১০ বছরে ব্যবহৃত ইমেইল ঠিকানার তালিকা। শুধু তাই নয়, কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তারা ইএসটিএ আবেদনে ধাপে ধাপে আরও উচ্চমূল্যের ডেটা ক্ষেত্র যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে।
এই অতিরিক্ত তথ্যের মধ্যে থাকবে ইলেকট্রনিকভাবে জমা দেওয়া ছবির মেটাডেটা, আবেদনকারীদের পরিবারের সদস্যদের বিস্তারিত ব্যক্তিগত তথ্য যেমন জন্মস্থান এবং গত পাঁচ বছরে ব্যবহৃত টেলিফোন নম্বর। পাশাপাশি আঙুলের ছাপ, ডিএনএ এবং আইরিস স্ক্যানসহ বিভিন্ন ধরনের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এই ঘোষণায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়নি, ভ্রমণকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টে ঠিক কী ধরনের তথ্য খোঁজা হবে বা কেন এত বিস্তৃত ডেটা সংগ্রহ প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মানবাধিকার ও গোপনীয়তা রক্ষাকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন বিভাগ জানিয়েছে, তারা জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে নেওয়া একটি নির্বাহী নির্দেশনার আলোকে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। ওই নির্দেশনায় সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ রোধে আরও কঠোর স্ক্রিনিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, যেসব দেশ ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের আওতায় নেই, সেসব দেশের ভ্রমণকারীদের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য জমা দেওয়ার বিধান আগে থেকেই চালু রয়েছে। এই নীতিমালা প্রথম চালু হয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসনের সময় এবং পরবর্তী প্রশাসনেও তা বহাল রয়েছে। নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলে ভিসা-মুক্ত দেশের ভ্রমণকারীদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের কড়া নজরদারি আরও বিস্তৃত পরিসরে প্রয়োগ করা হবে।



