ভারতের মুদ্রা রুপির অবমূল্যায়ন চলছেই, চলতি ডিসেম্বর মাসে ডলারের বিপরীতে রুপির দর ৯০ পেরিয়ে গেছে। শুক্রবার রেকর্ড অনুযায়ী প্রতি মার্কিন ডলারের সাপেক্ষে ভারতীয় মুদ্রার দাম দাঁড়িয়েছে ৯০ দশমিক ৫৬, যা রুপির ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্তর। এর আগে বৃহস্পতিবার রুপির দর ছিল ৯০ দশমিক ৩২।
চলতি বছরের শুরু থেকেই রুপির অবস্থান অনিশ্চিত। ধারাবাহিকভাবে দরপতন ঘটছে এবং বছরের শেষ প্রান্তে এসে তা রীতিমতো খাদের কিনারায় পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি সংক্রান্ত জটিলতা রুপির দরপতনের প্রধান কারণ। সম্প্রতি দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ফোন আলোচনা হয়েছে এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ভারতে এসেছেন আলোচনার জন্য; তবু রুপির পতনকে থামানো সম্ভব হয়নি।
রুপির দরপতনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদে বলা হয়েছে, আমদানিকারকদের ডলার কেনার চাপ এবং ভারতের শেয়ারবাজার থেকে চলতি বছর বড় পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার রুপির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারা অব্যাহত থাকায় রূপির ওপর চাপ আরও বাড়ছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন ধাতুর মূল্য বৃদ্ধিও রুপির অবমূল্যায়নের অন্যতম কারণ।
বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, ডলারের বিপরীতে রুপির দর ৮৯ পেরিয়ে যাওয়ার পরও তা ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়েছে। ভারতের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এর ফলে রুপি চলতি বছরের এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রার খেতাব পেয়েছে। শুধু ডলারের বিপরীত নয়, ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরো, জাপানি ইয়েন ও চীনা ইউয়ান—বিশ্বের প্রধান অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতেও রুপির দর কমেছে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগও ক্রমেই বাড়ছে। তারা রুপির স্থিতিশীলতা ও ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যচুক্তির বিষয়ে স্পষ্টতার দিকে নজর রাখছেন। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক চাপ এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ফ্যাক্টরগুলোর সমন্বয় না হলে রুপির দর আরও কমতে পারে।
এই অবস্থার প্রভাব বাংলাদেশিদের ওপরও পড়ছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া মানুষদের জন্য এটি এক ধরনের সুবিধা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ডলার ভাঙলে আগের তুলনায় বেশি রুপি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশে ডলারের দাম দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল রয়েছে, প্রায় ১২২ টাকার মধ্যে। দেশের বাজারে ডলারের স্থিতিশীলতা এবং ভারতে রুপির অবমূল্যায়নের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করছে।
যদিও বাংলাদেশ থেকে ভারতে ভ্রমণকারীর সংখ্যা করোনার পরিপ্রেক্ষিতে কমে গেছে এবং ভিসা-নিষেধাজ্ঞার কারণে সীমিত, তবু যারা যাত্রা করছেন, তাদের জন্য এই সময়ে রুপির দরপতন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়ে উঠেছে।
বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, রুপির এই দরপতন দেশীয় বাজার ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে আর্থিক পরিকল্পনা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের দিক থেকে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে।



