ইউরোপীয় মানবাধিকার সনদকে ঘিরে আশ্রয়নীতি সংক্রান্ত চলমান বিতর্ক আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং দীর্ঘদিন ধরে স্থবির থাকা মানবিক নীতিমালার মধ্যে একটি স্পষ্ট বৈপরীত্য তুলে ধরছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের বৈশ্বিক জনসংখ্যা স্থানান্তরের ধরণ ৭৫ বছর আগের পরিস্থিতি থেকে অনেকটাই আলাদা, যখন ইউরোপীয় মানবাধিকার সনদ প্রণয়ন করা হয়েছিল। পরিবর্তিত বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের আছে। একই সঙ্গে, তিনি সতর্ক করেছেন যে যদি অগ্রগতির পক্ষে থাকা সরকারগুলো বাস্তবতাকে অস্বীকার করে, তাহলে শরণার্থী অধিকার বিলুপ্ত করতে আগ্রহী জনতুষ্টিবাদী গোষ্ঠীগুলো সুযোগ নেবে।
তবে তিনি যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন, তা হলো এমন একটি নীতি তৈরি করা যাতে জনতুষ্টিবাদী শক্তির বক্তব্য অজান্তেই অনুসৃত না হয়। মানবাধিকার সনদের নির্যাতনবিরোধী এবং পারিবারিক জীবনের অধিকার সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলোর ব্যাখ্যা আধুনিকায়নের যে লক্ষ্য তিনি তুলে ধরছেন, সেখানে এই ঝুঁকিই সবচেয়ে বেশি।
সরকারের দাবি, মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষা অটুট থাকবে, কিন্তু এগুলোর প্রয়োগ এখন এতটাই বিস্তৃত যে তা অর্থনৈতিক ও সামাজিক কষ্টের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে, যেগুলো যুদ্ধ বা নির্যাতনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। যুক্তিটির মূল প্রতিপাদ্য হলো, অর্থনৈতিক অভিবাসীরা আশ্রয় ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এড়িয়ে যাচ্ছে এবং এ পরিস্থিতিতে তাদের দ্রুত বহিষ্কার করা সহজ হওয়া উচিত।
অবশ্যই আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে এবং বৈশ্বিকায়নের ফলে এ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। পঞ্চাশের দশকে যেমন কেউ সহজে মহাদেশ পেরিয়ে আশ্রয় খুঁজতে পারত না, তেমনি ভালো সুযোগের সন্ধানেও এতটা সহজ ছিল না। অর্থনৈতিক ও মানবিক কারণে দেশত্যাগের ব্যবধান সবসময়ই জনতুষ্টিবাদী কঠোর নীতির সমর্থকদের দাবির মতো স্পষ্ট নয়।
আরো একটি সাধারণ কৌশল হলো প্রকৃত শরণার্থীর প্রতি সহানুভূতির কথা বলে ইঙ্গিত দেওয়া যে এ ধরনের আবেদন অত্যন্ত কম এবং বাকিরা সন্দেহজনক। ফলে ছোট নৌকায় চ্যানেল পাড়ি দেওয়া মানুষের আশ্রয় দাবি আগেই দুর্বল মনে করা হয়। এরপর তাদের অবৈধ পথে আসা দেখিয়ে অপরাধী হিসেবে তুলে ধরা হয়।
এটি নীতিগত একটি ফাঁদ। নিরাপদ ও বৈধ পথ বেশি থাকলে অবৈধ পথে আশ্রয়প্রার্থী হওয়ার প্রবণতা কমে যেত। তাদের দাবি, তাদের ওপর নির্যাতনের ঝুঁকি কিংবা যুদ্ধের ভয় একই থাকত, শুধু আগমনের ধরনকে কেন্দ্র করে তাদের হেয় করার সুযোগ কমে যেত।
সরকার এ বাস্তবতা বুঝেছে। নিরাপদ বৈধ পথ খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নীতিতে রাখা হয়েছে, যদিও তা সীমিত এবং খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়নি, কারণ মূল বার্তা কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ। এই ভারসাম্যহীনতা সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির গভীর ত্রুটির দিকেই ইঙ্গিত করে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, জনমত ধরে রাখতে শরণার্থী সুরক্ষার পাশাপাশি অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের চাপ মোকাবিলা জরুরি। কিন্তু মানবাধিকারের স্থায়ী মূল্যবোধ রক্ষার প্রতিশ্রুতি বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে, যখন তাত্ক্ষণিক রাজনৈতিক সুবিধা আনার সিদ্ধান্তগুলো সামনে আসছে।
মানবাধিকার সুরক্ষা হারিয়ে যাচ্ছে বলে জনঅসন্তোষকে প্রমাণ হিসেবে দেখানোর বদলে নীতিনির্ধারকদের উচিত ন্যায়ের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে সে বিতর্কে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করা।



