নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির ট্রানজিশনাল টিমে থাকা বাংলাদেশি সদস্যদের সঙ্গে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাবের সভাপতি। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক। সভার শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সভাপতি।
ট্রানজিশনাল টিমের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বেশ কয়েকজন সদস্য। তাঁদের মধ্যে ছিলেন টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, একজন সিপিএ, কমিউনিটি সংগঠক, ড্রাম প্রতিনিধিসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানে টিমের আরেক সদস্য উপস্থিত থাকেন।
এ ছাড়া মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন আজকাল পত্রিকার সম্পাদক, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, উপদেষ্টা, বিভিন্ন কমিউনিটি প্রতিনিধিসহ স্থানীয় গণমাধ্যমের একাধিক বরেণ্য সাংবাদিক। অনুষ্ঠানে ট্রানজিশনাল টিমের সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয় প্রেসক্লাবের নতুন কার্যকরী কমিটির পক্ষ থেকে। উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক ও মিডিয়া পেশাজীবীরা।
ট্রানজিশনাল টিমের এক সদস্য জানান, নবনির্বাচিত মেয়র আগামী পহেলা জানুয়ারিতে শপথ নেবেন এবং তাঁর সঙ্গে কাজ করতে ইতিমধ্যে প্রায় সত্তর হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশিদের সঠিক সংখ্যা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের মধ্যে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া গেলে তাঁদের সিটি টিমে অন্তর্ভুক্ত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট নিজে হোয়াইট হাউসে বাংলাদেশের কমিউনিটির সক্রিয় ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন এবং জানিয়েছেন যে যেসব এলাকায় বাংলাদেশি ভোটার বেশি, সেসব জায়গায় নবনির্বাচিত মেয়র সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। এর ফলে বাংলাদেশি ভোটারদের গুরুত্ব হোয়াইট হাউস পর্যন্ত পৌঁছে গেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, সিটি হলে পাঠানোর জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের খোঁজ চলছে। ব্রুকলিন ও কুইন্সে একাধিক কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের দাবি করা হয়েছে নবনির্বাচিত মেয়রের কাছে। একই সঙ্গে ডিস্ট্রিক্ট ৩৬ এর এসেম্বলি প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার অনুরোধও জানান তিনি। তাঁর মতে, কমিউনিটির মিডিয়া নবনির্বাচিত মেয়রকে বিজয়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
অন্য এক বক্তা, যিনি সিপিএ হিসেবে পরিচিত, বলেন যে নবনির্বাচিত মেয়রের বিজয় সহজ ছিল না। একটি শক্তিশালী গ্রুপ তাঁর বিরুদ্ধে কাজ করেছে এবং এমনকি তৎকালীন প্রেসিডেন্টও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের বিরোধিতাও ছিল। কিন্তু মুসলিম ও বাংলাদেশি ভোটারদের ভোটই তাঁকে বিপুল ব্যবধানে জয়ী করেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এ বছর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানরা সবচেয়ে বেশি ভোট প্রদান করেছেন, যার ফলেই তাঁরা ট্রানজিশনাল টিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছেন। এটি ব্যক্তি অর্জন নয়, পুরো কমিউনিটির সাফল্য বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আরেক বক্তা বলেন, এই নির্বাচন শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসের ব্যয় দিন দিন বাড়ছে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় নবনির্বাচিত মেয়রকে সিটি হলে পাঠানোই ছিল সময়ের দাবি।
ড্রাম প্রতিনিধির বক্তব্যে উঠে আসে যে ২০০৮ সালে দেশে আসার পর থেকে তিনি নীরব ও অবিচল পরিশ্রমের মাধ্যমে একাধিক নন প্রফিট প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তাঁর ভাষায়, বাংলাদেশিদের মধ্যে বারোজন সদস্য নিজেদের যোগ্যতায় ট্রানজিশনাল টিমে স্থান পেয়েছেন এবং এতে সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিদেরও অবদান রয়েছে।
একজন স্কুল বোর্ড সদস্য বলেন, কমিউনিটির সহযোগিতায় তিনি বোর্ডে যুক্ত হতে পেরেছেন এবং বিশ্বাস করেন নবনির্বাচিত মেয়র তাঁদের দাবি ও প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেবেন। তিনি জানান, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ভালো করছে এবং ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ভবিষ্যতে তারা আরও এগিয়ে যাবে।
শেষ বক্তা তুলে ধরেন, সাশ্রয়ী ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই সংগ্রাম চলছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি না তা স্পষ্ট নয় এবং বাংলাদেশি কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।



