Sunday, December 28, 2025
spot_img
HomeএডুকেশনRod Paige এর শিক্ষা-দর্শনে যুক্তরাষ্ট্রের বড় পরিবর্তন

Rod Paige এর শিক্ষা-দর্শনে যুক্তরাষ্ট্রের বড় পরিবর্তন

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক শিক্ষা সচিব এবং দেশের প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান শিক্ষা প্রধান, প্রভাবশালী শিক্ষাবিদ রড পেইজ ৯২ বছর বয়সে মারা গেছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এক বিবৃতিতে পেইজের মৃত্যুর খবর জানান। তবে কী কারণে তিনি মারা গেছেন তা প্রকাশ করা হয়নি।

শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘ ক্যারিয়ারধারী এই প্রশাসক ২০০১ সালে দেশব্যাপী আলোচিত “নো চাইল্ড লেফট বিহাইন্ড” শিক্ষা নীতি বাস্তবায়নের নেতৃত্ব দেন। ২০০২ সালে কার্যকর হওয়া এই নীতি পেইজের নেতৃত্বেই শিক্ষা বিভাগ গ্রহণ করে। উদ্যোগটি মূলত হিউস্টনের স্কুল সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে তাঁর পূর্বের কাজের মডেল অনুসরণে তৈরি হয়। এতে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য অভিন্ন পরীক্ষা মানদণ্ড চালু করা হয় এবং নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা হয়।

বুশ তাঁর বিবৃতিতে বলেন যে পেইজ ছিলেন এক দৃঢ় নেতৃত্বদাতা যিনি “কম প্রত্যাশার নরম বৈষম্য” ভাঙতে কাজ করেছিলেন। তিনি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, শিশুটি কোথায় জন্মেছে তার ওপর যেন তার সাফল্য নির্ভর না করে।

মিসিসিপির ছোট শহর মন্টিসেলোতে দুই শিক্ষক দম্পতির ঘরে জন্ম নেওয়া পেইজ পাঁচ ভাইবোনের বড় ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে দুই বছর সেবা করার পর তিনি প্রথমে হাইস্কুল এবং পরে জুনিয়র কলেজ পর্যায়ে ফুটবল কোচ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে নিজের আলমা ম্যাটার জ্যাকসন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন। সেখানে তিনি ১৯৬৭ সালে তাঁর দলকে নিয়ে মিসিসিপি ভেটেরান্স মেমোরিয়াল স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো বর্ণবৈষম্যহীনভাবে খেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি করেন, যা সে সময়ের জন্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল।

সত্তরের দশকের মাঝামাঝি তিনি টেক্সাস সাউদার্ন ইউনিভার্সিটিতে যোগ দিতে হিউস্টনে আসেন। সেখানে কোচিং থেকে ধীরে ধীরে শিক্ষকতা এবং পরে প্রশাসনিক দায়িত্বে সম্পৃক্ত হন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষার মানোন্নয়নে তাঁর আগ্রহ এবং কঠোর মনোভাব ক্রমে ব্যাপক প্রশংসা পায় এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় স্কুল জেলা হিউস্টন ইন্ডিপেনডেন্ট স্কুল ডিস্ট্রিক্টের সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পান।

হিউস্টনে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার দ্রুত টেক্সাসের রাজনৈতিক অঙ্গনে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি মূল্যায়নে কঠোর মানদণ্ড তৈরির প্রচেষ্টা ছিল উল্লেখযোগ্য, যা পরে বুশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনী প্রচারণায় কেন্দ্রে জায়গা করে নেয়। বুশ প্রায়ই হিউস্টনের এই পরিবর্তনকে “টেক্সাস মিরাকল” বলে উল্লেখ করতেন।

২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় পেইজ মনে করতেন যে শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য উচ্চ প্রত্যাশা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে শিশুদের ছোট কাজ দিয়ে সন্তুষ্ট রাখা সবচেয়ে সহজ বিষয়, কিন্তু সেটাই হওয়া উচিত নয়। বরং তাদের বড় লক্ষ্য দেওয়া এবং সেই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করাই প্রয়োজন।

তবে “নো চাইল্ড লেফট বিহাইন্ড” নীতি নিয়ে সমালোচনা ছিল যথেষ্ট। অনেক শিক্ষকের অভিযোগ ছিল, অতিরিক্ত পরীক্ষা ব্যবস্থার কারণে পাঠদানের মান কমেছে এবং শিক্ষকরা মূলত পরীক্ষামুখী পাঠে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস এই নীতির অনেকাংশ শিথিল করে এবং ফেডারেল সরকারকে পরীক্ষার মান নির্ধারণে সীমিত ভূমিকা দেয়। নতুন শিক্ষা সংস্কার তখনকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আইনে স্বাক্ষর করলে তা কার্যকর হয়।

সচিব হিসেবে দায়িত্ব শেষ করার পর পেইজ আবারও জ্যাকসন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ফিরে যান এবং ২০১৬ সালে ৮৩ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জীবনের শেষ বয়সেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ ও আশাবাদ প্রকাশ করতে থাকেন। ২০২৪ সালে প্রকাশিত এক মতামত নিবন্ধে তিনি হিউস্টনের শিক্ষা অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানান।

রড পেইজের দীর্ঘ যাত্রা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments