ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে টানাপোড়েন নতুন করে তীব্র হওয়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত দ্বিতীয় দফার একটি বিশেষ ফ্লাইট দেশত্যাগ করেছে বলে জানিয়েছে তেহরান। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে ফিরে আসা এই দফায় ৫৫ জন ইরানি রয়েছেন। মার্কিন প্রশাসন আরও শতাধিক ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
এই বহিষ্কার কার্যক্রম এমন সময় সামনে আসে যখন কয়েক মাস আগে ইসরায়েলের সঙ্গে তেহরানের ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। এর পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে দেশটির ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেভাবে বুদ্ধিজীবী, বিরোধীচিন্তার ব্যক্তিত্ব এবং বন্দিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, তা নিয়ে বিদেশে থাকা মানবাধিকারকর্মীদের উদ্বেগও বাড়ছে।
সোমবার প্রকাশিত বিচারবিভাগীয় মুখপত্র মিজান নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই ৫৫ নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ওই কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে অব্যাহত অভিবাসনবিরোধী নীতি এবং বিদেশিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে তারা নিজ দেশে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও রোববার জানান, এই দফায় ৫৫ জন নাগরিককে দেশে ফেরানোর পরিকল্পনার কথা আগেই মার্কিন দিক থেকে জানানো হয়েছিল। তাঁর বক্তব্যে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি কারণ ছিল এবং তাদের অভিবাসন বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখনো বহিষ্কার সংক্রান্ত এই ফ্লাইটের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানায়নি। ফ্লাইটটি তেহরানে পৌঁছেছে কি না, সে তথ্যও তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
এই পরিস্থিতি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতির সঙ্গে বর্তমান প্রশাসনের অগ্রাধিকারের সংঘাতে রূপ নিয়েছে। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর বহু ইরানি রাজনৈতিক নির্যাতন, ধর্মীয় নিপীড়ন বা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ঝুঁকি এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ওয়াশিংটনও দীর্ঘ সময় ধরে আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রহণে সংবেদনশীল অবস্থান ধরে রেখেছিল। তবে নতুন প্রশাসন অবৈধ অভিবাসন দমনে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় তা এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তৈরি করেছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে ইরান জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনুযায়ী প্রায় ৪০০ নাগরিককে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে। সেই মাসেই প্রথম বহিষ্কারকারী ফ্লাইট তেহরানে অবতরণ করে।
ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের মধ্যে কেবল অপরাধের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে আছে, তারাই আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হবেন। অন্যরা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারবেন বলে দাবি করা হয়। তবে দেশের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের আগেও তেহরান গ্রেপ্তার করেছে এবং বন্দি বিনিময়ে তাদের ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ভিন্নমতাবলম্বীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগেও ওয়াশিংটনকে সমালোচনা করেছে ইরান। অপরদিকে মার্কিন প্রসিকিউটররা দাবি করেছেন, আমেরিকায় অবস্থানরত ভিন্নমতাবলম্বীদের লক্ষ্য করে হামলার পরিকল্পনায় ভাড়াটে হামলাকারী নিয়োগ করেছে তেহরান।



