Monday, December 29, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যসুদানে আকাশ হামলার ভয়াবহ চিত্র উন্মোচিত

সুদানে আকাশ হামলার ভয়াবহ চিত্র উন্মোচিত

সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যেই দেশটির বিমানবাহিনী আবাসিক এলাকা, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাস্তুচ্যুতদের শিবিরে ধারাবাহিক বোমাবর্ষণ চালিয়েছে। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে এক হাজার সাতশ মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানায় একটি সাম্প্রতিক তদন্ত। আন্তর্জাতিকভাবে তথ্য যাচাই ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নথিবদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত একটি প্রকল্পের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

‘সুদান উইটনেস প্রজেক্ট’ নামের এই উদ্যোগ জানায়, ২০২৩ সালের এপ্রিলে নতুন করে শুরু হওয়া লড়াইয়ের পর থেকে সরকারি বাহিনী যে বৃহৎ আকারের বিমান হামলা পরিচালনা করেছে এবং যেসব হামলায় বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, সেসব তথ্য সংগ্রহ করে একটি বিস্তারিত তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পের বিস্তৃত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিমানবাহিনী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনবহুল এলাকায় ‘আনগাইডেড’ বা অনিয়ন্ত্রিত বোমা ব্যবহার করেছে। এমন বোমা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নিক্ষেপ করা হয় না, ফলে আকাশ থেকে ফেলে দিলে যেকোনো জনসমাগম এলাকায় পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, প্যারামিলিটারি র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফ আকাশ থেকে হামলা পরিচালনায় ড্রোন ব্যবহার করেছে, তবে এই গবেষণায় ড্রোন হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ, তদন্তটি শুধু যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে চালানো সরাসরি বিমান হামলার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে। সুদানের সরকারি সশস্ত্র বাহিনীর কাছে যুদ্ধবিমান থাকলেও আরএসএফের কাছে এমন কোনো সক্ষমতা নেই।

সেন্টার ফর ইনফরমেশন রেজিলিয়েন্স পরিচালিত এই প্রকল্পটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ করার কাজে নিয়োজিত এবং উদ্যোগটি ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি প্রতিবেদনের একটি আগাম অনুলিপি হাতে পেয়েছে। সেখানে বলা হয়, প্রকল্পটি ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত সংঘটিত তিন শতাধিক বিমান হামলার তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এসব হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে এক হাজার সাতশ মানুষ এবং আহত হয়েছেন এক হাজার একশর বেশি। যদিও প্রকল্পটির ধারণা, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে, কারণ এই হিসাব সর্বনিম্ন তথ্য ধরে প্রস্তুত করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করা অত্যন্ত কঠিন। এসব অঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা দুর্বল, নির্ভরযোগ্য সূত্র শনাক্ত করাও জটিল। ফলে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে চালানো হামলার ঘটনা আরও বেশি হলেও তা নথিবদ্ধ করা সম্ভব হয়নি বলে ধারণা করা হয়। বিশ্লেষণের আওতায় থাকা ৩৮৪টি ঘটনায় দেখা যায়, অন্তত ৩৫টি হামলা চালানো হয়েছে বাজার ও বাণিজ্যিক এলাকায়, যেখানে হামলার সময় মানুষের ভিড় ছিল স্বাভাবিক। এ ছাড়া ১৯টি হামলা পরিচালিত হয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্রে।

সুদান উইটনেস প্রজেক্ট স্বীকার করেছে যে তাদের এই গবেষণা সম্পূর্ণ নয়। ফলাফল দেওয়া হয়েছে কেবল তাদের হাতে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে, মোট হামলার সংখ্যা বিবেচনা করে নয়। সংঘর্ষময় অঞ্চলগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহের অক্ষমতা, দুর্বল যোগাযোগব্যবস্থা এবং সীমিত সূত্রের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে প্রকল্পটি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments