যুক্তরাষ্ট্রে আইনশিক্ষা নিয়ে আলোচনা হলেই সাধারণত আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশন বা এ বি এ অনুমোদিত প্রায় ২০০ আইন বিদ্যালয়ের কথা সামনে আসে। এসব প্রতিষ্ঠানের স্নাতকরা যোগ্যতা পূরণ করলেই দেশের যেকোনো অঙ্গরাজ্যে বার পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। তবে অনুমোদন ছাড়া আইন বিদ্যালয় পরিচালনার পথও খোলা আছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৩০টির বেশি অননুমোদিত আইন বিদ্যালয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর বেশিরভাগই ক্যালিফোর্নিয়ায়, যেখানে এসব প্রতিষ্ঠানের স্নাতকদের বার পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। আরও কিছু অঙ্গরাজ্য, যেমন আলাবামা, নির্দিষ্ট অননুমোদিত বিদ্যালয়ের স্নাতকদের বার পরীক্ষার সুযোগ দিয়ে থাকে।
সম্প্রতি টেক্সাস, ফ্লোরিডা, টেনেসি ও ওহাইও নিজেদের মানদণ্ড তৈরির বিষয়ে আলোচনা করেছে, যদিও এসব অঙ্গরাজ্যের আইন বিদ্যালয়গুলো এখনো এ বি এ অনুমোদন ধরে রাখার দিকেই ঝুঁকে আছে। কারণ অনুমোদিত ডিগ্রি থাকলেই স্নাতকরা অন্য অঙ্গরাজ্যের বার পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন।
আইন বিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য এ বি এ নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসরণ করতে হয়। পাঠ্যক্রম থেকে শুরু করে শিক্ষকের যোগ্যতা, অবকাঠামো থেকে শিক্ষাসেবা সবই এই মানদণ্ডের আওতায় পড়ে। নিয়মিতভাবে এসব মানদণ্ড হালনাগাদও করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০২৪ সালে এ বি এ তাদের নিয়ম পরিবর্তন করে জানায় যে অনুমোদিত আইন বিদ্যালয়ের অন্তত ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে আর বাধ্যতামূলকভাবে এলএসএটি বা জিআরই স্কোর জমা দিতে হবে না। ওই বছর ১৪টি আইন বিদ্যালয় পরীক্ষাহীন আবেদন গ্রহণের অনুমতি পায়। পাশাপাশি অনলাইন জেডি প্রোগ্রাম সম্প্রসারণেও বেশ কিছু নতুন ছাড় দেওয়া হয়। অনুমোদন ধরে রাখতে বিদ্যালয়গুলোকে প্রতিবছর একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে হয়, যাতে ভর্তি প্রতিযোগিতা, বৈচিত্র্য, বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার হার এবং কর্মসংস্থানের অবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে। নতুন কোনো আইন বিদ্যালয় অনুমোদন পেতে চাইলে এসব মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হয়, আর যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয় সেগুলোকে শর্তসাপেক্ষ অবস্থায় রাখা হয় বা অনুমোদন বাতিল করা হয়।
অননুমোদিত আইন বিদ্যালয় তুলনামূলকভাবে কম প্রতিযোগিতামূলক হওয়ায় কম ফলাফল বা কম এলএসএটি স্কোর থাকা আবেদনকারীদের জন্য এগুলোই হয়ে ওঠে বাস্তবসম্মত বিকল্প। এমন বিদ্যালয়গুলো সাধারণত খরচে কম, সময় ব্যবস্থায় নমনীয় এবং অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি অনলাইন সুযোগও থাকে। ফলে বয়সে বড় বা কর্মরত শিক্ষার্থীদের কাছে এগুলোর আকর্ষণ বেশি। এছাড়া অবস্থান, বৈচিত্র্যের মাত্রা, ধর্মভিত্তিক কাঠামো কিংবা বিশেষ ধরনের শিক্ষা পদ্ধতির কারণেও অনেকেই এসব বিদ্যালয় বেছে নেন।
তবে সুবিধার পাশাপাশি আছে বড় ধরনের ঝুঁকি। অনেক ক্ষেত্রে অননুমোদিত আইন বিদ্যালয়ের স্নাতকরা স্বল্প খরচে পড়লেও স্নাতকোত্তর ক্যারিয়ারে পিছিয়ে পড়েন। অনুমোদিত বিদ্যালয়ের তুলনায় এদের বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার হার ও কর্মসংস্থানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ২০২৫ সালের আগস্টে ক্যালিফোর্নিয়ার স্টেট বার কর্তৃক প্রকাশিত ২০২৪ সালের তথ্যভিত্তিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজ্যের অনুমোদিত বিদ্যালয়গুলোর স্নাতকদের বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার হার অননুমোদিত বিদ্যালয়গুলোর তুলনায় ১১ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। আরও দেখা যায়, অননুমোদিত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ড্রপআউটের হার বেশি এবং তারা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে জেডি ডিগ্রি-সংবলিত চাকরিতে প্রবেশেও পিছিয়ে পড়েন।
অননুমোদিত আইন বিদ্যালয়গুলো আর্থিকভাবে দুর্বলও হতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে সব আইন বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে, এর বেশিরভাগই ছিল অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া খুব কম অঙ্গরাজ্যই অননুমোদিত বিদ্যালয়ের স্নাতকদের বার পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়। যদিও ক্যালিফোর্নিয়া বড় আইনি বাজার, তার বার পরীক্ষা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কঠিন হিসেবে পরিচিত, আর প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি। ফলে অননুমোদিত বিদ্যালয়ের স্নাতকদের জন্য অবস্থান সুবিধাজনক হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
উল্লেখযোগ্য আরেকটি বিষয় হল ক্যালিফোর্নিয়া সেই চারটি অঙ্গরাজ্যের একটি যেগুলোতে আইন বিদ্যালয়ে না পড়েই ঐতিহ্যগত অ্যাপ্রেন্টিসশিপের মাধ্যমে বার পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবুও সত্য হচ্ছে, অননুমোদিত আইন বিদ্যালয় থেকে পাস করেও অনেকে বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সফল আইনজীবী হতে পারেন, এবং পেশাগত জীবনে প্রবেশের পর তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে তেমন আলোচনা থাকে না। অনেক অঙ্গরাজ্য এমনকি ক্যালিফোর্নিয়ার বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আইনজীবীদের নিজস্ব বার পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেয়।
তবে সব বিবেচনায় অননুমোদিত আইন বিদ্যালয় বেছে নেওয়ার আগে সতর্ক হওয়া জরুরি। প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে কতটা স্থিতিশীল, স্নাতকদের সাফল্য কতটা নিশ্চিত তা যাচাই করা প্রয়োজন। এর পরিবর্তে এ বি এ অনুমোদিত বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে এলএসএটি স্কোর উন্নত করা, প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা অর্জন বা আবেদনপত্র আরও শক্তিশালী করার পথ বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রথমবার ভর্তি না পেলেও পুনরায় আবেদন করে নিজের যোগ্যতা বাড়ানোর সুযোগ থাকে। দীর্ঘমেয়াদে এসব প্রস্তুতিই নিশ্চিত করে আইন পেশায় স্থিতিশীল অগ্রগতি, অননুমোদিত বিদ্যালয়ের সিট গ্রহণ নয়।



