এক সময় যে এক সেন্টের মুদ্রাকে প্রায় মূল্যহীন বলে মনে করা হতো, সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা সংগ্রাহকেরা। কারণ, মাত্র তিনটি এক সেন্টের মুদ্রা নিলামে বিক্রি হয়েছে অবিশ্বাস্য ৮ লাখ মার্কিন ডলারে। ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রেই, যেখানে সম্প্রতি এক সেন্টের মুদ্রা তৈরি বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির প্রশাসন।
বর্তমান প্রশাসনের যুক্তি ছিল স্পষ্ট। আধুনিক সময়ে নগদ লেনদেন কমে গেছে। মানুষ এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, মোবাইল অ্যাপ কিংবা প্লাস্টিকের কার্ড ব্যবহার করে দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করছে। ফলে ছোট মূল্যমানের মুদ্রার ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর পাশাপাশি এক সেন্টের মুদ্রা তৈরি করতে যে খরচ হয়, তা মুদ্রাটির প্রকৃত মূল্য থেকেও কয়েক গুণ বেশি। এসব কারণ বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ধাতব মুদ্রাশালা এক সেন্টের উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।
ফিলাডেলফিয়ায় অবস্থিত ইউএস মিন্টে চলতি বছরের ১২ নভেম্বর সর্বশেষ এক সেন্টের মুদ্রা তৈরি করা হয়। এর মাধ্যমে শেষ হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রে ধাতব এক সেন্টের দীর্ঘ ২৩২ বছরের ইতিহাস। ১৭৯৩ সালে প্রথম এক সেন্টের মুদ্রা তৈরি শুরু হয়েছিল। সেই ঐতিহাসিক পথচলার পরিসমাপ্তি ঘটলেও, এখান থেকেই শুরু হয় এক সেন্টের নতুন এবং ব্যতিক্রমী যাত্রা।
ইউএস মিন্ট তাদের ২৩২ বছরের স্মরণে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা ২৩২টি সেট বাজারে ছাড়ে। প্রতিটি সেটে ছিল তিনটি করে এক সেন্টের মুদ্রা। এই সেটগুলোর মধ্যে শেষ অর্থাৎ ২৩২তম সেটটি নিলামে ওঠে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নিলামে ওই শেষ সেটটি বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ৮ লাখ মার্কিন ডলারে। শুধু তাই নয়, যে তিনটি ছাঁচ ব্যবহার করে এই তিনটি মুদ্রা তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলোও ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নিলামটির আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা নিলাম সংস্থা স্ট্যাকস বাওয়ার্স গ্যালারিজ। ওই নিলামে মোট ২৩২টি সেট বিক্রি হয়। প্রতিটি সেটে থাকা তিনটি মুদ্রাসহ সব মিলিয়ে নিলাম থেকে উঠে আসে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া ২৩২তম সেটটি নিলামের ইতিহাসে বিশেষ স্থান করে নেয়।
প্রতিটি সেটে অন্তর্ভুক্ত ছিল তিন ধরনের এক সেন্ট। এর মধ্যে একটি তৈরি করা হয় ফিলাডেলফিয়া মিন্টে, আরেকটি ডেনভার মিন্টে। তৃতীয়টি ছিল ২৪ ক্যারেট সোনায় তৈরি একটি বিশেষ এক সেন্টের মুদ্রা। প্রতিটি মুদ্রায় খোদাই করা ছিল একটি বিশেষ ওমেগা প্রতীক, যা একটি যুগের সমাপ্তির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
নিলাম সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের ঐতিহাসিক ও প্রতীকী পণ্যের বাজারমূল্য আগেভাগে নির্ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন। তাঁর মতে, সংগ্রাহকদের আবেগ, ইতিহাসের গুরুত্ব এবং বিরলতার কারণে এ ধরনের মুদ্রার দাম অনেক সময় প্রত্যাশার বাইরে চলে যায়।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, তিনি প্রায় চার দশক ধরে মুদ্রার নিলামের সঙ্গে যুক্ত। এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এমন ঘটনা তিনি আগে কখনো দেখেননি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে এক সেন্টের মুদ্রা তৈরি বন্ধ হওয়ার মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে তৈরি করা এই শেষ সেটগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।
একদিকে যখন যুক্তরাষ্ট্রে দৈনন্দিন জীবনে এক সেন্টের ব্যবহার প্রায় বিলুপ্ত, অন্যদিকে তখনই এই ক্ষুদ্র মুদ্রাই সংগ্রাহকদের কাছে হয়ে উঠেছে অমূল্য সম্পদ। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা তিনটি এক সেন্টের মুদ্রা প্রমাণ করেছে, মূল্য শুধু আর্থিক নয়, সময় ও স্মৃতির সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িয়ে থাকে।



