Saturday, December 27, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যসোমালিল্যান্ড স্বীকৃতি ইসরায়েলের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত

সোমালিল্যান্ড স্বীকৃতি ইসরায়েলের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত

রাষ্ট্র হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল। এর মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে দেশটি। হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে এই পদক্ষেপকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ কূটনৈতিক অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গত শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে ইসরায়েল ও সোমালিল্যান্ড একটি যৌথ ঘোষণাপত্রে সই করেছে। এই ঘোষণাপত্র আব্রাহাম চুক্তির চেতনার আলোকে স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ইসরায়েল যে আব্রাহাম চুক্তি করেছিল, সেটির ধারাবাহিকতায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় সোমালিয়া সরকার। এক বিবৃতিতে দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত সোমালিয়ার সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত এবং এটি একটি বেআইনি পদক্ষেপ। সোমালিয়া সরকার পুনর্ব্যক্ত করে যে সোমালিল্যান্ড তাদের রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সোমালিল্যান্ড ১৯৯১ সালে সোমালিয়ার কাছ থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। তবে দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও জাতিসংঘের কোনো সদস্য রাষ্ট্র এত দিন অঞ্চলটিকে স্বীকৃতি দেয়নি। একসময়ের ব্রিটিশশাসিত উত্তর সোমালিয়ার উত্তর পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এই ভূখণ্ডের স্বাধীনতার দাবি বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে এসেছে সোমালিয়া।

প্রথম দেশ হিসেবে ইসরায়েল স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। সোমালিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিসর, তুরস্ক ও জিবুতির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করেন। আলোচনায় তিনটি দেশই সোমালিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে।

মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভেতরের কোনো অঞ্চলের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী। এ ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় একটি বিপজ্জনক নজির তৈরি করতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়। রাষ্ট্রগুলোর ঐক্য, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার মৌলিক ভিত্তি বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে ভিডিও কলে সোমালিল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধানকে অভিনন্দন জানান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি সোমালিল্যান্ড নেতৃত্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন এবং রাষ্ট্রপ্রধানকে ইসরায়েল সফরের আমন্ত্রণ জানান।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রায় এক বছর ধরে দুই সরকারের মধ্যে চলা সংলাপের ফলেই এই যৌথ ঘোষণাপত্র সই হয়েছে। দুই দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে একমত হওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে উভয় দেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ ও দূতাবাস খোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।

এই ঘোষণাকে সোমালিল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধান ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, তাঁর দেশ আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত হতে প্রস্তুত।

তবে এই স্বীকৃতির বিরোধিতা করেছে আফ্রিকান ইউনিয়নও। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার যেকোনো উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। আফ্রিকান ইউনিয়নের মতে, সোমালিয়া একটি সদস্য রাষ্ট্র এবং সোমালিল্যান্ড তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংস্থাটির প্রধান বলেন, সোমালিয়ার ঐক্য ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা ক্ষুণ্ন করার যেকোনো চেষ্টা গোটা মহাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

তিন দশকের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়ার পর প্রথম কোনো দেশের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেতে যাওয়ার ঘটনাটি সোমালিল্যান্ডের জন্য একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের সময় চলা দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অঞ্চলটি সোমালিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ওই সময় উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের অভিযোগ রয়েছে।

পরবর্তী সময়ে সোমালিয়ার বড় অংশ যখন বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত ছিল, তখন ১৯৯০ এর দশকের শেষ দিকে সোমালিল্যান্ডে তুলনামূলক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। ধীরে ধীরে তারা আলাদা একটি রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলে। নিজস্ব সংসদ, মুদ্রা ও পতাকা রয়েছে অঞ্চলটির। রাজধানী হারগেইসা। তবে পূর্বাঞ্চলের কিছু এলাকা নিয়ে এখনো বিরোধ রয়ে গেছে এবং সেসব অঞ্চলের সব জনগোষ্ঠী বিচ্ছিন্নতার পক্ষে নয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সোমালিল্যান্ড সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত আব্রাহাম চুক্তিতে সই করা দেশ হওয়ায় এই যোগাযোগ বিশেষ গুরুত্ব পায়।

যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রভাবশালী রিপাবলিকান রাজনীতিক ইসরায়েল ও সোমালিল্যান্ডের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার পক্ষে অবস্থান নিলেও এখনো ওয়াশিংটনের আনুষ্ঠানিক নীতিতে কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments