Tuesday, December 23, 2025
spot_img
Homeআপনার স্বাস্থ্যসোনালি সময়: স্ট্রোকে জীবন বাঁচানোর চাবিকাঠি

সোনালি সময়: স্ট্রোকে জীবন বাঁচানোর চাবিকাঠি

স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে হঠাৎ আঘাত বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এবং দীর্ঘমেয়াদি পঙ্গুত্বের মূল উৎস। বিশেষ করে ইসকেমিক স্ট্রোক, যা মোট স্ট্রোকের প্রায় ৮৫ শতাংশ, মস্তিষ্কের রক্তনালিতে জমাট বাঁধার ফলে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়াকে নির্দেশ করে। এই ধরনের স্ট্রোকের সময় রোগীর জীবন রক্ষা এবং স্থায়ী ক্ষতি কমাতে থ্রম্বোলাইসিস চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

থ্রম্বোলাইসিস একটি আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি, যেখানে শিরায় বিশেষ ধরনের ওষুধ, যেমন টিস্যু প্লাজমিনোজেন অ্যাকটিভেটর (টিপিএ), প্রয়োগ করা হয়। এই ওষুধ জমাট বাঁধা রক্তকে দ্রবীভূত করে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে রক্ত চলাচল পুনরুদ্ধার করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটি একটি বৈপ্লবিক পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত এবং সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এর কার্যকারিতা স্বীকৃত।

স্ট্রোকের চিকিৎসায় সময়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা স্ট্রোক হওয়ার প্রথম সাড়ে চার ঘণ্টাকে ‘সোনালি সময়’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কারণ মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষের বেঁচে থাকার জন্য রক্ত অপরিহার্য, আর রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলে প্রতি মিনিটে প্রায় ৯০ লাখ কোষ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। তাই যত দ্রুত রক্তনালীতে জমাট বাঁধা রক্ত দূর করা যায়, রোগীর পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা তত বাড়ে।

থ্রম্বোলাইসিসের প্রয়োগে ‘সোনালি জানালা’ হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা। স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসা শুরু করা উচিত। সাধারণত সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে থ্রম্বোলাইসিস শুরু করলে রোগীর সর্বোচ্চ উপকার হয়। এই সময়সীমা পেরিয়ে গেলে ওষুধ প্রয়োগের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং চিকিৎসার কার্যকারিতা কমে আসে।

স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিত করতে ‘বি ফাস্ট (BE FAST)’ পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর:

  • B (Balance): ভারসাম্য হারানো বা হঠাৎ চলাচলে সমস্যা।

  • E (Eyes): দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া বা দুই চোখের মধ্যে অসামঞ্জস্য।

  • F (Face): মুখের একপাশ অবিকল বা ঢেলে যাওয়া।

  • A (Arms): হাত বা পা দুর্বল বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া।

  • S (Speech): কথা বলার ক্ষেত্রে জটিলতা বা অস্পষ্ট উচ্চারণ।

  • T (Time): সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানো।

যদি এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে দেরি না করে রোগীকে এমন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে যেখানে স্ট্রোক ইউনিট এবং থ্রম্বোলাইসিস করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই নিউরোসায়েন্স সেন্টারসহ কয়েকটি করপোরেট হাসপাতালে এই সুবিধা চালু রয়েছে।

দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলে থ্রম্বোলাইসিস রোগীর স্থায়ী পঙ্গুত্ব দূর করতে সাহায্য করে এবং অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাই স্ট্রোকের কোনো লক্ষণ দেখামাত্রই এক মুহূর্তও বিলম্ব না করে জরুরি বিভাগে পৌঁছানো জীবন রক্ষার মূল চাবিকাঠি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments