Tuesday, December 23, 2025
spot_img
Homeবিজনেসসোনার দামে ইতিহাস, তেলেও ঊর্ধ্বগতি

সোনার দামে ইতিহাস, তেলেও ঊর্ধ্বগতি

বিশ্ববাজারে সোনার দামে আবারও নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। আজ সকালে এই প্রতিবেদন লেখার সময় আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম দাঁড়িয়েছে আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৪৮৬ দশমিক ৫৬ ডলারে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামেও ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তা, সুদহার কমার সম্ভাবনা এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুযায়ী, গতকাল সোমবার মাত্র এক দিনেই সোনার দাম আউন্সপ্রতি প্রায় ১৪৭ ডলার বেড়েছে। দিনের শুরুতেই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সোনার দাম ৪ হাজার ৪০০ ডলারের ঘর অতিক্রম করে। বাজারের বর্তমান গতি বিবেচনায় নিলে খুব শিগগিরই সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক স্বর্ণবাজার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে সোনার বাজারে এই উল্লম্ফন নজিরবিহীন।

হঠাৎ করে সোনার দামের এমন ঊর্ধ্বগতির পেছনে বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার নিয়ে সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী বছর নীতি সুদহার আরও কমতে পারে এমন প্রত্যাশা থেকেই বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিমুক্ত সম্পদ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। এর ফলেই সোনার চাহিদা বেড়েছে এবং দাম নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে।

চলতি বছরের শুরুতে সোনার দাম ছিল আউন্সপ্রতি প্রায় ২ হাজার ৬০০ ডলার। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়তে থাকায় সোনার দাম দ্রুতগতিতে ঊর্ধ্বমুখী হয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন মেয়াদে সরকারের নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাও নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে সোনার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সোনার বাজার নিয়ে গবেষণাকারী একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চলতি বছরে সোনার দাম ৬৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ১৯৭৯ সালের পর আর কোনো বছরে এত বড় উল্লম্ফন দেখা যায়নি। তাঁর মতে, বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি এড়াতে সোনার দিকেই বেশি ঝুঁকছেন।

বাংলাদেশের বাজারেও এই বৈশ্বিক প্রবণতার সরাসরি প্রভাব পড়েছে। গতকাল এক লাফে ভরিপ্রতি চার হাজার টাকা দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার টাকায়, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতি ও ডলারের বিনিময় হারের প্রভাবেই দেশের বাজারে এই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নীতি সুদহার কমলে সাধারণত বন্ডসহ অন্যান্য সুদভিত্তিক বিনিয়োগে লাভের সম্ভাবনা কমে যায়। তখন বিনিয়োগকারীরা লাভ ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সোনা ও রুপার মতো মূল্যবান ধাতুর দিকে ঝুঁকেন। বর্তমানে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই দফা সুদহার কমাতে পারে।

সোনার পাশাপাশি অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর বাজারেও রেকর্ড তৈরি হয়েছে। সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে রুপার দাম আউন্সপ্রতি ৬৯ দশমিক ৪৪ ডলারে পৌঁছে নতুন সর্বোচ্চ অবস্থানে গেছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত রুপার দাম বেড়েছে ১৩৮ শতাংশ। একই সময়ে প্লাটিনামের দামও ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকদের মতে, শিল্প উৎপাদনে এসব ধাতুর ব্যবহার বাড়ায় চাহিদা শক্তিশালী রয়েছে, অথচ সরবরাহ সীমিত থাকায় দাম দ্রুত বাড়ছে।

এদিকে বিশ্ববাজারে তেলের দামও কিছুটা বেড়েছে। সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে একটি তেলবাহী জাহাজ আটক করার ঘটনায় বাজারে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং চলতি মাসে এটি দ্বিতীয় ঘটনা। এই ঘটনার প্রভাবে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেলে ১ দশমিক ৬১ ডলার বেড়ে ৬২ দশমিক ০৮ ডলারে পৌঁছেছে। একই সময়ে ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় ৫৭ দশমিক ৯৮ ডলার।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে চলতি বছর তেলের বাজার তুলনামূলকভাবে নিম্নমুখী ছিল। বছরের শুরুতে দাম বর্তমানের চেয়ে বেশি ছিল, যদিও সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাজারে স্বল্পমেয়াদি চাপ তৈরি করেছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments