শীতকালে ফুসফুসের স্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে গেলে ফুসফুসের নানা রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। যারা আগে থেকেই শ্বাসনালীর সমস্যা বা অন্যান্য ফুসফুসের রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য বায়ুদূষণ উপসর্গ তীব্র করে তোলে। তবে নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস ও শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব।
ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে বিভিন্ন ধরনের শ্বাসের ব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকর। এগুলোর মাধ্যমে ফুসফুসের বায়ুধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শ্বাসনালীর মাধ্যমে শরীরের ভিতরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়। বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি থাকলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
পার্সড লিপ ব্রিদিং
এই ব্যায়াম করার জন্য প্রথমে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে হবে। নিশ্বাস ছাড়ার সময় ঠোঁট গোল করে রাখুন, যেমন মোমবাতি নিভানোর সময় ফুঁ দেয়া হয়। নিশ্বাস ছাড়ার সময় ধীরগতি বজায় রাখুন এবং শ্বাস নেওয়ার সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ সময় নিন। মুখ দিয়ে বাতাস বের করার সময় একটি হালকা শব্দ হবে। প্রতিদিন দু-তিনবার এই ব্যায়াম করুন, প্রতিবার ১০টি করে শ্বাস।
ডায়াফ্র্যামাটিক ব্রিদিং
এই ব্যায়ামে এক হাত বুকের ওপর এবং অন্য হাত পেটের ওপর রাখুন। নাক দিয়ে শ্বাস নিন যাতে পেট ফুলে ওঠে, বুক নয়। এরপর মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এটি ফুসফুসের গভীর অংশকে সক্রিয় করে এবং বায়ু প্রবাহ বাড়ায়। প্রতিদিন দু-তিনবার, প্রতবার ১০টি শ্বাসের জন্য এই ব্যায়াম করা যেতে পারে।
অন্যান্য কার্যকর ব্যায়াম
শ্বাসের ব্যায়ামের পাশাপাশি সাধারণ শারীরিক ব্যায়ামও ফুসফুসের জন্য উপকারী। হাঁটা, জগিং, দৌড়, দড়িলাফ, সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটার মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বৃদ্ধি পায়। ফুসফুসের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কেবল ধীরগতিতে হাঁটা বা ব্যায়াম যথেষ্ট নয়, শ্বাসের গতি বাড়ানো প্রয়োজন।
মাঝারি ধাঁচের ব্যায়ামের জন্য সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট সময় দিতে হবে। এই ব্যায়ামে আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হবে এবং ব্যায়ামের প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যেই ঘাম আসা শুরু হবে। এই ধরণের ব্যায়ামের সময়ে কথা বলা সম্ভব, তবে স্বাভাবিক সুরে নয়।
তীব্র ধাঁচের ব্যায়ামে সপ্তাহে কমপক্ষে ৭৫ মিনিট সময় দেওয়া উচিত। তীব্র ব্যায়ামের সময় শুধু শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয় না, বরং গভীরও হয়। ব্যায়ামের প্রথম কয়েক মিনিটেই ঘাম আসা শুরু হবে এবং এই সময় কথা বলা সম্ভব হবে না।
আপনি চাইলে মাঝারি এবং তীব্র ধাঁচের ব্যায়ামের সমন্বয়ও করতে পারেন। এতে ব্যায়ামের মোট সময় সপ্তাহে সামঞ্জস্য রেখে রাখা যায় এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা সর্বোচ্চ রূপে বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে ফুসফুসের শক্তি বৃদ্ধি পায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের মান উন্নত হয় এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকে।



