Wednesday, December 31, 2025
spot_img
Homeসম্পাদকীয়শিশুদের জন্য পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তোলার সময়

শিশুদের জন্য পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তোলার সময়

পরবর্তী বছরকে ঘিরে ঘোষিত হয়েছে জাতীয় পাঠ্যবর্ষ ২০২৬, যার মূল উদ্দেশ্য শিশুদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস বৃদ্ধি করা। শিশুদের ছোট বয়স থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে তারা শুধু শিক্ষাগত সাফল্য অর্জন করে না, বরং মানসিক সুখ, সহানুভূতি এবং সামাজিক অগ্রগতিতেও এগিয়ে যায়। তাই এই উদ্যোগটি সময়োপযোগী এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে আনন্দের জন্য বই পড়ার হার গত দুই দশকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ৮ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু তাদের অবসর সময়ে বই পড়তে পছন্দ করে। এই হারের পতন সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে কিশোর ছেলে ও নিম্ন আয়ের শিশুদের মধ্যে। এ বছর ইংল্যান্ডের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চমাংশ শিক্ষার্থী পর্যাপ্ত পাঠ্যদক্ষতা ছাড়াই বের হয়েছে।

পাঠ্যাভ্যাস যেমন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়, তেমনি গল্পকথনের শিল্পও। এই সংযোগ ভেঙে গেলে শিশুরা বই পড়ার দক্ষতা হারাতে পারে। জাতীয় পাঠ্যবর্ষ ২০২৬ এর মতো উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এই প্রকল্পের আওতায় সবচেয়ে প্রয়োজনীয় শিশুদের কাছে ৭২,০০০ নতুন বই বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে।

২০২৬ সালে প্রথমবারের মতো শিশুদের বুকার প্রাইজ চালু হবে, যা ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য। ২০২৭ সাল থেকে এই পুরস্কার বার্ষিকভাবে প্রদান করা হবে। শিশুদের লরেট এবং শিশু বিচারকদের সমন্বয়ে পুরস্কার প্যানেল গঠিত হবে। নির্বাচিত বইগুলি হাজার হাজার শিশুকে প্রদান করা হবে। আরও ছোট বয়সী শিশুদের জন্য, সাংস্কৃতিক নীতি বিষয়ক একটি গবেষণা সংস্থা প্রস্তাব করছে, যে সকল নবজাতককে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাইব্রেরির কার্ড দেওয়া হোক।

শিশুর প্রথম ১,০০০ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় যৌথভাবে বই পড়া শিশুদের বৌদ্ধিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। এটি শুধুমাত্র সাক্ষরতার প্রশ্ন নয়, বরং বন্ধন ও আবেগের বিকাশেরও বিষয়। দিনের শেষে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি একসাথে গল্প পড়ার সময় একটি বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পর্দার সামনে থাকা কোনো মাধ্যমই এই অভিজ্ঞতার বিকল্প হতে পারে না।

যুক্তরাজ্যের শিশুদের মধ্যে বর্তমানে ৩-৪ বছর বয়সীদের একটি চতুর্থাংশেরই স্মার্টফোন রয়েছে এবং ১৩ বছরের নিচের অর্ধেক শিশু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার পাঠ্যাভ্যাসে হ্রাসের একটি কারণ। তবে সমস্যা কেবল এটিই নয়। শিশুর দারিদ্র্য, লাইব্রেরি বন্ধ হওয়া, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, একক পিতামাতার দায়িত্ব, স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে গল্প পড়ার সময় দিতে পারছেন না। অনেকের জন্য বই অল্পস্বল্প দামী বা সহজলভ্য নয়।

শিশুদের পাঠ্যাভ্যাস বৃদ্ধির জন্য যেকোন উদ্যোগই উৎসবের মতো স্বাগতযোগ্য। তবে শুধু কথার উপর ভর করা যথেষ্ট নয়, সঠিক সম্পদ এবং অর্থায়ন থাকা প্রয়োজন। নবজাতক শিশুদের জন্য বই ও লাইব্রেরির কার্ড দেওয়াও যথেষ্ট নয়, যদি চারপাশে বই পড়ার আগ্রহী প্রাপ্তবয়স্ক না থাকে বা লাইব্রেরি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত লাইব্রেরি, প্রশিক্ষিত লাইব্রেরিয়ান, বিশেষ শিক্ষাগত চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য উন্নত সুবিধা এবং নতুন অভিভাবক ও শিশুর সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

একটি শিশু কাব্যিক লেখার মতোই উল্লেখ করেছেন, “এক শব্দের পর এক শব্দের ক্ষমতা আছে।” আমরা শিশুদের এই ক্ষমতা দিতে বাধ্য। তাই নতুন বছরকে লক্ষ্য করে একটি প্রতিজ্ঞা করা যেতে পারে—নিজের জন্য, বন্ধুর জন্য বা শিশুর জন্য আরও বই পড়া।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments