Wednesday, December 24, 2025
spot_img
Homeএডুকেশনযুক্তরাজ্যের পাঠ্যক্রমে বড় পরিবর্তন আসছে

যুক্তরাজ্যের পাঠ্যক্রমে বড় পরিবর্তন আসছে

যুক্তরাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এক বছরের দীর্ঘ পর্যালোচনা শেষে পাঠ্যক্রম ও মূল্যায়নে দশটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ঘোষণা করা হয়েছে। এই পর্যালোচনার নেতৃত্বে ছিলেন একজন অধ্যাপক, যাকে সরকার ইংল্যান্ডের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রীয় শিক্ষা কাঠামো বিশ্লেষণের দায়িত্ব দেয়। পুরো প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের সাত হাজারের বেশি মতামত সংগ্রহ করা হয় এবং বিশেষজ্ঞ প্যানেলের যাচাই শেষে ১৯৭ পৃষ্ঠার এক বিস্তৃত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে যে দশটি সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়েছে, সেগুলোর লক্ষ্য হলো শিক্ষাকে পরীক্ষাকেন্দ্রিকতা থেকে বের করে জীবন দক্ষতা ও বাস্তব শিক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া।

প্রতিবেদনে জিসিএসই পরীক্ষার সময় কমানো, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি তৈরি এবং ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তৃতি নিশ্চিত করার মতো উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব রয়েছে। নিচে প্রতিটি সুপারিশ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।

১. জিসিএসই পরীক্ষার সময় কমানো
জেনারেল সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন বা জিসিএসই যুক্তরাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যা শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের প্রধান ধাপ হিসেবে বিবেচিত। প্রতিবেদনে এ পরীক্ষার সময় ১০ শতাংশ কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রায় তিন ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইংল্যান্ডের ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য বর্তমান পরীক্ষার সংখ্যা ও সময় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি। সাধারণত ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বাধ্যতামূলক থাকলেও আরও প্রায় ৬০টির মতো বিষয় থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে। এই পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় বা এ লেভেলে অগ্রসর হওয়ার ভিত্তি তৈরি করে।

২. জিসিএসইর পাঠ্যবস্তু কমানো
বিশেষ করে ইতিহাস ও বিজ্ঞান বিষয়ের পাঠ্যবস্তু কিছুটা হালকা করার প্রস্তাব এসেছে, যাতে শিক্ষার্থীরা শারীরিক শিক্ষা, নাগরিক শিক্ষা এবং সম্পর্ক ও স্বাস্থ্যবিষয়ক বাধ্যতামূলক কিন্তু মূল্যায়নবহির্ভূত বিষয়গুলোতে যথেষ্ট সময় দিতে পারে।

৩. ইংলিশ ব্যাকালোরিয়েট বাতিল
ইংলিশ ব্যাকালোরিয়েট বা ইবাক শিক্ষার্থীদের আটটি মূল বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছিল এবং শিল্প ও বৃত্তিমূলক বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করেছিল। দীর্ঘদিন ধরে শিল্প ও সৃজনশীল খাতের শিক্ষকরা এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন। নতুন প্রতিবেদনে তাই এটিকে বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

৪. সামাজিক বৈচিত্র্য অন্তর্ভুক্তি
পাঠ্যক্রমে যুক্তরাজ্যের আধুনিক সমাজের জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে আরও দৃশ্যমানভাবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পরিচয় ও বাস্তবতা পাঠ্যক্রমে প্রতিফলিত দেখতে পাবে।

৫. ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তৃতি
ধর্মীয় শিক্ষাকে সব স্তরে জাতীয় পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে অনেক প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষার মান সন্তোষজনক নয় এবং শিক্ষার্থীরা স্কুল-পরবর্তী বাস্তব জীবনের জন্য এতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি পাচ্ছে না। তাই স্থানীয় কাউন্সিল নয়, বরং জাতীয়ভাবে এর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।

৬. গণিত ও ইংরেজিতে নতুন মূল্যায়ন
৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের শেখার ঘাটতি চিহ্নিত করতে গণিত ও ইংরেজিতে নতুন ধরনের মূল্যায়ন চালুর প্রস্তাব এসেছে। তবে শিক্ষক ইউনিয়নগুলো এটিকে অপ্রয়োজনীয় মনে করছে, কারণ সরকারের নিজস্ব ন্যাশনাল রিডিং টেস্ট ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত রয়েছে।

৭. নাগরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলককরণ
প্রাথমিক স্তর থেকেই নাগরিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে আর্থিক সচেতনতা, গণমাধ্যম সম্পর্কে জ্ঞান, জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

৮. প্রাথমিক ব্যাকরণ শিক্ষার পুনর্মূল্যায়ন
প্রাথমিক স্তরের ব্যাকরণ শিক্ষা ও মূল্যায়ন পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে অপ্রয়োজনীয় বিষয় বাদ দিয়ে বাস্তব লেখালেখি ও প্রয়োগভিত্তিক ব্যাকরণে বেশি গুরুত্ব দেওয়া যায়।

৯. কম্পিউটিং সায়েন্স জিসিএসই পরিবর্তন
বর্তমান কম্পিউটিং সায়েন্স জিসিএসইয়ের পরিবর্তে আরও বিস্তৃত কম্পিউটিং পাঠ্যক্রম চালুর প্রস্তাব এসেছে। এর লক্ষ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আধুনিক ডিজিটাল দক্ষতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে গড়ে তোলা।

১০. ট্রিপল সায়েন্সে সুযোগ নিশ্চিতকরণ
সব শিক্ষার্থীকে ডাবল সায়েন্সের সীমাবদ্ধতা থেকে বের করে ট্রিপল সায়েন্স অর্থাৎ জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান গ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করার নীতি প্রণয়ন করতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments