ব্যাডমিন্টন কোর্টে তখন চরম উত্তেজনা। একের পর এক শট আদানপ্রদান হচ্ছে। র্যাকেটের আঘাতে শাটলকক কখনো এক প্রান্তে, কখনো আরেক প্রান্তে উড়ে যাচ্ছে। দর্শকদের চোখ আটকে আছে কোর্টের দিকে। প্রথম নজরে এটি সাধারণ কোনো ব্যাডমিন্টন ম্যাচ বলেই মনে হতে পারে। কিন্তু একটু ভালো করে তাকালেই বোঝা যায়, এই ম্যাচটি অন্য সব ম্যাচ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
এই ব্যতিক্রমী ম্যাচে একপক্ষের খেলোয়াড় মানুষ হলেও অপরপক্ষের প্রতিদ্বন্দ্বী একজন মানুষ নয়, বরং একটি চার চাকার রোবট। ব্যাডমিন্টন খেলায় মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রোবটের উপস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রযুক্তি কি তবে খেলাধুলার মাঠেও মানুষের সমকক্ষ হয়ে উঠছে।
মানুষ ও রোবটের এই অভিনব ব্যাডমিন্টন ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছে চীনে। শুধু প্রদর্শনী ম্যাচ হিসেবেই নয়, বরং এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে একটি বিশ্বরেকর্ডও গড়া হয়েছে। চীনের একটি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের তৈরি ব্যাডমিন্টন খেলতে সক্ষম রোবটটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অর্জন করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি কেড়েছে।
এই ব্যতিক্রমী আয়োজনটি হয়েছে চীনের ঝেজিয়াং প্রদেশের শাওশিং শহরে। সেখানেই গিনেস কর্তৃপক্ষ রেকর্ডটি যাচাই করে স্বীকৃতি দেয়। ম্যাচ চলাকালে চীনের কয়েকজন দক্ষ ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় রোবটটির বিপক্ষে খেলেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কোর্টে সহযোগিতা করেন, যাতে রেকর্ডটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করা যায়।
ম্যাচে রোবটটি যে কৃতিত্ব দেখিয়েছে, সেটিই তাকে বিশ্বরেকর্ডের আসনে বসিয়েছে। রোবটটি একাধিক মানব খেলোয়াড়ের বিপক্ষে টানা ১ হাজার ৪৫২ বার সফলভাবে শাটলকক ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়। কোনো বিরতি ছাড়াই এতবার শট ফেরত দেওয়ার ঘটনা মোবাইল রোবটের ক্ষেত্রে আগে কখনো দেখা যায়নি। গিনেস কর্তৃপক্ষ এটিকে চলমান বা নড়াচড়া করতে সক্ষম রোবটের টানা সর্বোচ্চ ‘কাউন্টার হিট’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এই ব্যাডমিন্টন খেলুড়ে রোবটটি তৈরি করেছে ঝেজিয়াংয়ের একটি প্রযুক্তি কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোবটটির নকশায় অত্যাধুনিক ভিশন সিস্টেম ও উন্নত গতিনিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই ভিশন সিস্টেম শাটলককের গতি, দিক ও উচ্চতা খুব দ্রুত শনাক্ত করতে পারে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে রোবটটি মুহূর্তের মধ্যেই প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া জানায়।
রোবটটির নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে সময়ের হিসাব মিলিসেকেন্ড পর্যায়েও নির্ভুলভাবে করা সম্ভব হয়। ব্যাডমিন্টনের মতো দ্রুতগতির খেলায় এই সূক্ষ্ম সময়জ্ঞানই রোবটটির সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করেছে। শাটলকক যখন উচ্চ গতিতে কোর্টের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে আসছে, তখন রোবটটি নির্ভুল অবস্থানে পৌঁছে সেটিকে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।
রেকর্ড গড়ার পুরো সময়জুড়ে রোবটটির সঙ্গে মানব খেলোয়াড়দের সমন্বয় ছিল চোখে পড়ার মতো। দীর্ঘ সময় ধরে কোনো বড় ধরনের ভুল ছাড়াই রোবটটি শাটলকক ফিরিয়ে দিয়েছে। ব্যাডমিন্টন কোর্টে মানুষের পাশাপাশি একটি রোবটের এমন নিখুঁত ও ধারাবাহিক উপস্থিতি আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রগতিকে আবারও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।
এই রেকর্ড শুধু একটি সংখ্যার অর্জন নয়, বরং খেলাধুলায় প্রযুক্তির সম্ভাবনার দিকটিও তুলে ধরছে। মানুষের তৈরি যন্ত্র যে এখন কেবল শিল্পকারখানা বা গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ নেই, বরং খেলাধুলার মাঠেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে, এই ঘটনা তারই উদাহরণ। মানুষ ও প্রযুক্তির এই মেলবন্ধন ভবিষ্যতে আরও নতুন বিস্ময় সৃষ্টি করতে পারে, এমন ইঙ্গিতই দিয়ে গেল এই ব্যাডমিন্টন রোবটের বিশ্বরেকর্ড।



