Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবাংলাদেশমাদারীপুরে রাতভর পাঁচ স্থানে মশালমিছিল

মাদারীপুরে রাতভর পাঁচ স্থানে মশালমিছিল

মাদারীপুরে জুলাই মাসের গণ–অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিবাদে নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা রাতভর মশালমিছিল করেছে। জেলার সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অনুষ্ঠিত এ মিছিলগুলো চলে সোমবার রাত ১০টা থেকে মঙ্গলবার ভোররাত ২টা পর্যন্ত।

স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, প্রথম মশালমিছিলটি শুরু হয় সদর উপজেলার ছিলারচর এলাকায় বড় সেতুর ওপর। প্রায় ১৫ থেকে ১৭ জন অংশগ্রহণকারী মশাল হাতে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা যায়, যাদের হাতে একটি ব্যানারও ছিল। রাত ১০টার দিকে অনুষ্ঠিত এ মিছিলটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। প্রায় দুই মিনিটের ওই ভিডিওতে অংশগ্রহণকারীদের সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যেতে দেখা গেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে তারা স্লোগান দিচ্ছিলেন। বেশিরভাগের মুখে মাস্ক ও মাথায় শীতের টুপি বা চাদর ছিল, যা তাদের পরিচয় গোপন রাখার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে।

এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরই গভীর রাতে আরও চারটি পৃথক মশালমিছিল বের হয় সদর উপজেলার ধুরাইল, মস্তফাপুর, খাগদী ও পেয়ারপুর এলাকার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কে। প্রতিটি মিছিলে ১০ থেকে ১২ জন করে নেতা-কর্মী অংশ নেন। তারাও মশাল হাতে একই ইস্যুতে প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যান। এসব হঠাৎ করা ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা দ্রুত উপস্থিত হয়ে আবার দ্রুতই সরে যান, যা মিছিলগুলোর পরিকল্পিত ও সংগঠিত প্রকৃতিকে স্পষ্ট করে।

এগুলোর ভিডিওও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা মঙ্গলবার সকালে এলাকাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করে। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, গভীর রাতের অন্ধকারে গ্রামীণ সড়কগুলোতে সারিবদ্ধভাবে হাঁটতে থাকা অংশগ্রহণকারীদের মশালের আলো চারপাশ আলোকিত করছে। যদিও মিছিলগুলো হঠাৎ করে শুরু হয়ে শেষ হয়ে গেছে, তবুও তাদের উপস্থিতি স্থানীয়দের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

মঙ্গলবার সকালে জেলার এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অনুসন্ধান) বলেন, তারা বিভিন্ন মাধ্যমে এসব মশালমিছিলের তথ্য পেয়েছেন। তিনি জানান, নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন এবং তার ছাত্রসংগঠনের কর্মীরা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রায়ের প্রতিবাদে মশালমিছিল করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ও ছবিগুলো ইতোমধ্যে যাচাই করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ঘটনাগুলো আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এদিকে স্থানীয়দের একটি অংশ জানান, মধ্যরাতে এমন মশালমিছিল এলাকায় বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তবে মিছিলগুলো সংক্ষিপ্ত সময়েই শেষ হয়ে গেলে কেউ সরাসরি বাধা দিতে পারেনি। স্থানীয়ভাবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

নিষিদ্ধ সংগঠনের সাম্প্রতিক এই সক্রিয়তা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাতের অন্ধকারে সংগঠিত ধারাবাহিক পাঁচটি মশালমিছিল প্রশাসনের নজর কাড়লেও, স্থানীয়দের মতে এটি ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের প্রদর্শনের ইঙ্গিত হতে পারে। বর্তমানে পুলিশ ঘটনাগুলো মূল্যায়ন করছে এবং আইনগত পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments