Sunday, December 21, 2025
spot_img
Homeপ্রযুক্তি জগৎমঙ্গল কক্ষপথে নাসার ম্যাভেন নীরব

মঙ্গল কক্ষপথে নাসার ম্যাভেন নীরব

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ মঙ্গল অভিযানে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে অবস্থানরত মহাকাশযান ম্যাভেনের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি। টানা ১১ বছর ধরে সফলভাবে কাজ করার পর হঠাৎ করেই সংকেত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে এবং যোগাযোগ পুনরুদ্ধারের সম্ভাব্য সব পথ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নাসার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে ম্যাভেনের সব সাব-সিস্টেম স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল। কোনো ধরনের যান্ত্রিক বা সফটওয়্যার ত্রুটির পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি। ফলে সংকেত হারানোর বিষয়টি বিজ্ঞানীদের কাছে আরও জটিল হয়ে উঠেছে। সংস্থাটির ভাষ্য অনুযায়ী, মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে থাকা মহাকাশযানের সঙ্গে স্বল্প সময়ের জন্য যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া নতুন কিছু নয়। গ্রহটির অবস্থান, সূর্য ও মহাকাশ পরিবেশের প্রভাবের কারণে এমন ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা দিয়েছে, কারণ মঙ্গল গ্রহের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসার পরও ম্যাভেনের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

ম্যাভেন উৎক্ষেপণ করা হয় ২০১৩ সালে এবং পরের বছর সেপ্টেম্বর মাসে এটি মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে। অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল গ্রহটির ওপরের বায়ুমণ্ডল, সৌর বাতাস এবং সূর্যের সঙ্গে মঙ্গল গ্রহের পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা। দীর্ঘ ১১ বছরের গবেষণায় ম্যাভেন মঙ্গল সম্পর্কে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে, যা বিজ্ঞানীদের ধারণায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে।

এই মহাকাশযানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো, সূর্য থেকে আসা সৌর বাতাস ধীরে ধীরে মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলকে মহাশূন্যে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এই দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়ের ফলেই একসময় উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশ থাকা মঙ্গল গ্রহ আজ শুষ্ক ও শীতল গ্রহে পরিণত হয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। ম্যাভেনের তথ্যের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো এই প্রক্রিয়াটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছে।

এ ছাড়া ম্যাভেন মঙ্গল গ্রহের একটি অদৃশ্য চুম্বকীয় লেজের অস্তিত্ব শনাক্ত করে, যা সৌর বাতাসের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার কারণে বাঁক নেয়। এই আবিষ্কার গ্রহটির চৌম্বক পরিবেশ বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। একই সঙ্গে ম্যাভেন শনাক্ত করেছে প্রোটন অরোরা নামে এক বিরল ধরনের আলোকপ্রপঞ্চ, যা এর আগে কখনো মঙ্গল গ্রহে প্রত্যক্ষ করা হয়নি।

বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি ম্যাভেন একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ রিলে স্টেশন হিসেবেও কাজ করছিল। মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে অবস্থানরত রোভারগুলো পৃথিবীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে না। এই ক্ষেত্রে ম্যাভেনের মাধ্যমে রোভারগুলো নির্দেশনা গ্রহণ করত এবং তাদের সংগ্রহ করা তথ্য পৃথিবীতে পাঠাত। ফলে ম্যাভেনের সংকেত বিচ্ছিন্ন হওয়া মানে শুধু একটি অরবিটারের ক্ষতি নয়, বরং পুরো মঙ্গল অনুসন্ধান কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িকভাবে অকার্যকর হয়ে পড়া।

তবে নাসা জানিয়েছে, ম্যাভেনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও মঙ্গল গ্রহের চারপাশে আরও দুটি সক্রিয় অরবিটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৫ সালে উৎক্ষেপণ করা একটি অরবিটার বর্তমানে গ্রহটির পৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডল নিয়ে উচ্চমানের পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছে। অন্যদিকে ২০০১ সালে উৎক্ষেপণ করা আরেকটি অরবিটার মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করা মহাকাশযান হিসেবে পরিচিত, যা ভূতাত্ত্বিক ও জলবায়ু সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে চলেছে।

নাসার বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে, চলমান তদন্তের মাধ্যমে ম্যাভেনের সংকেত বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ শনাক্ত করা যাবে এবং যোগাযোগ পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে। ১১ বছরের সাফল্যময় অভিযানের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া তথ্য মঙ্গল গবেষণায় ইতিমধ্যেই স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে, আর এই মহাকাশযানকে ফের সক্রিয় করা গেলে ভবিষ্যতের গবেষণায় আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments