ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) সম্প্রতি নীতি সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের মুদ্রানীতি কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে রেপো হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দিয়েছে। এই পরিবর্তন তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন।
সুদহার হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে আরবিআই দেশের বাজারে ১৬ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত তারল্য প্রবাহ ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। এই অর্থ মূলত বন্ড ক্রয় এবং বৈদেশিক মুদ্রা অদলবদলের (এফএক্স সুইপ) মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এই উদ্যোগ অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং ঋণগ্রহণের সুবিধা সম্প্রসারিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত আরবিআই চার দফায় নীতি সুদহার কমিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার ২৫ বেসিস পয়েন্ট হ্রাসের মাধ্যমে রেপো হার ৬ দশমিক ২৫ শতাংশে নেমে আসে। এরপর এপ্রিল ও জুন মাসেও প্রতিবার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানো হয়, যার ফলে রেপো হার বর্তমানে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ১ বেসিস পয়েন্ট মানে ১ শতাংশের ১০০ ভাগের ১ ভাগ।
আরবিআই-এর নীতি সুদহার কমানোর পূর্ববর্তী ঘটনা ২০২০ সালের মে মাসে দেখা গিয়েছিল। করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম ঢেউয়ের সময় অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিপর্যস্ত হওয়ায় তখন সুদহার কমানো একমাত্র সমাধান ছিল। পরবর্তীতে পাঁচ বছরের জন্য সুদহার অপরিবর্তিত থাকলেও ২০২২ সালে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালের মে থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ২৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
মূলত, রেপো হার হলো সেই সুদের হার যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংককে ঋণ প্রদান করে। রেপো হার কমানো হলে বাণিজ্যিক ঋণের সুদের হারও কমে যায়, ফলে ব্যক্তি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সহজে ঋণ নিতে পারে। অপরদিকে, রেপো হার বাড়ালে ঋণ নেওয়া ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে এবং অর্থনীতিতে ঋণের প্রবাহ কমে যায়। এইভাবে নীতি সুদহার কমানো অর্থনীতিকে উদারতা এবং ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর সুযোগ দেয়।
গভর্নর এই বিষয়ে বলেন, ‘প্রতিকূল বৈশ্বিক পরিবেশ সত্ত্বেও ভারতের অর্থনীতি শক্তিশালী স্থিতিশীলতা প্রদর্শন করেছে এবং প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে রয়েছে। মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস আমাদের এমন অবস্থানে রাখতে সাহায্য করেছে যা প্রবৃদ্ধি সমর্থন করে।’
মার্কেটের জন্য তারল্য বৃদ্ধির বিষয়ে গভর্নর আরও জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১ ট্রিলিয়ন রুপির সমমূল্য (১১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার) বন্ড ক্রয় করে ব্যাংক ব্যবস্থায় তরলতা সরবরাহ করবে। এছাড়া পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ডলার–রুপি লেনদেনের মাধ্যমে তারল্য বাড়ানো হবে। বন্ড ক্রয়ের কার্যক্রম ১১ ও ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এবং তিন বছর মেয়াদি এফএক্স সুইপ কার্যক্রম ১৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
এই পদক্ষেপ অর্থনীতিতে ঋণের প্রবাহ বাড়াবে, বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশকে আরও উদার ও সহায়ক করবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সুদহার হ্রাস এবং বাজারে অতিরিক্ত তারল্য সরবরাহ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করবে এবং মধ্যমেয়াদে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি আনবে।



