Monday, December 22, 2025
spot_img
Homeবিজনেসবিলিয়ন ডলারের জ্যাকপটের নতুন যুগ

বিলিয়ন ডলারের জ্যাকপটের নতুন যুগ

যুক্তরাষ্ট্রের লটারি ইতিহাসে এক সময় এক বিলিয়ন ডলারের জ্যাকপট ছিল প্রায় অকল্পনীয়। কিন্তু গত পাঁচ বছরে সেই সীমা ভেঙেছে বারবার। বুধবার রাতের পাওয়ারবল ড্রয়িংয়ে কেউ জ্যাকপট না জেতায় শীর্ষ পুরস্কারের পরিমাণ বেড়ে শনিবারের জন্য আনুমানিক এক বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্যাকপট। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে ১ দশমিক ৭৮৭ বিলিয়ন ডলারের পাওয়ারবল পুরস্কার জয় হয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম বড় ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লটারি জ্যাকপট যে দ্রুত বড় হয়ে উঠছে, তা কেবল ধারণা নয়, বাস্তবতা। ২০১৬ সালে প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি জ্যাকপট দেওয়া হয়, যখন ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া ও টেনেসির টিকিটধারীরা ১ দশমিক ৫৮৬ বিলিয়ন ডলারের পাওয়ারবল পুরস্কার ভাগ করে নেন। বর্তমান পাওয়ারবল জ্যাকপটটি হলে এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্তত এক বিলিয়ন ডলার বা তার বেশি মূল্যের ১৪তম লটারি পুরস্কার এবং ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১২তম।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দুটি লটারি গেম, পাওয়ারবল ও মেগা মিলিয়নস, সচেতনভাবেই বড় জ্যাকপট তৈরির দিকে এগোচ্ছে। এর পেছনে কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে।

প্রথমত, টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি। গত ১৩ বছরে এই দুই লটারির টিকিটের দাম ধীরে ধীরে বেড়েছে। বিক্রির একটি অংশ পুরস্কার তহবিলে যোগ হয় এবং জ্যাকপট না জিতলে সেটি পরবর্তী ড্রয়িংয়ে যুক্ত হয়ে আরও বড় হয়। ফলে টিকিটের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই জ্যাকপট দ্রুত বড় হতে থাকে। ২০১২ সালে পাওয়ারবল টিকিটের দাম এক ডলার থেকে বাড়িয়ে দুই ডলার করা হয়, যা এখনো বহাল রয়েছে। মেগা মিলিয়নসও একই পথে হেঁটেছে। ২০১৭ সালে এক ডলার থেকে দুই ডলারে উন্নীত করার পর চলতি বছরে টিকিটের দাম বাড়িয়ে পাঁচ ডলার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, এর উদ্দেশ্য হলো আরও বড় ও দ্রুত বেড়ে ওঠা জ্যাকপট নিশ্চিত করা।

দ্বিতীয়ত, জেতার সম্ভাবনা বা অডস পরিবর্তন। লটারিতে জ্যাকপট জেতার সম্ভাবনা বরাবরই খুব কম ছিল, তবে গত এক দশকে তা আরও কঠিন করা হয়েছে। পাওয়ারবল জ্যাকপট জিততে হলে পাঁচটি সাদা বল ও একটি লাল বলসহ মোট ছয়টি সংখ্যাই মিলতে হয়। ২০১৫ সালে কর্তৃপক্ষ সাদা বলের সংখ্যার পরিসর বাড়ায় এবং লাল বলের পরিসর কমায়। এর ফলে ছোট অঙ্কের পুরস্কার জেতার সুযোগ কিছুটা বাড়লেও জ্যাকপট জেতার সম্ভাবনা কমে যায়। আগে যেখানে সম্ভাবনা ছিল প্রায় ১৭ কোটি ৫২ লাখে এক, সেখানে তা নেমে আসে প্রায় ২৯ কোটি ২২ লাখে এক।

একজন অর্থনীতির অধ্যাপক এ প্রসঙ্গে বলেন, সংখ্যার পরিসর ও ড্রয়ের ধরন বদলে দিয়ে যেকোনো ধরনের সম্ভাবনার লটারি তৈরি করা যায়। লটারি সংস্থাগুলো বুঝেছে, কম অঙ্কের পুরস্কারের জন্য মানুষ টিকিট কেনে না। অধিকাংশ খেলোয়াড়ের লক্ষ্য একটাই, হঠাৎ করে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া। তাই বড় জ্যাকপট তৈরি করাই তাদের মূল কৌশল।

মেগা মিলিয়নসও একই কৌশল নিয়েছে। ২০১৭ সালে এই লটারির জ্যাকপট জেতার সম্ভাবনা প্রায় ২৫ কোটি ৮৯ লাখে এক থেকে কমিয়ে ৩০ কোটি ২৬ লাখে এক করা হয়। চলতি বছরে সম্ভাবনা সামান্য উন্নত হলেও একই সঙ্গে টিকিটের দাম বাড়ানো হয়েছে।

তৃতীয়ত, সুদের হার। লটারি জ্যাকপট সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে দেওয়া হয়। একটি হলো ৩০ বছরের কিস্তিতে বাড়তে থাকা বার্ষিক অর্থপ্রদান, অন্যটি এককালীন নগদ অর্থ। বিজ্ঞাপনে যে বিশাল অঙ্কটি দেখানো হয়, সেটি সাধারণত কিস্তিভিত্তিক মোট মূল্য। এককালীন নগদ অর্থ সব সময়ই কম হয়। উদাহরণ হিসেবে শনিবারের এক বিলিয়ন ডলারের জ্যাকপটের এককালীন মূল্য প্রায় ৪৫৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার। সুদের হার বেশি থাকলে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ থেকে বেশি আয় সম্ভব হয়, ফলে কিস্তিভিত্তিক জ্যাকপটের অঙ্ক আরও বড় দেখানো যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুদের হার তুলনামূলক বেশি থাকায় এই অঙ্কও ফুলে উঠেছে।

চতুর্থত, প্রায় সারা দেশে লটারির বিস্তার। একসময় পাওয়ারবল ও মেগা মিলিয়নস আলাদা আলাদা অঙ্গরাজ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১০ সালের একটি চুক্তির পর অধিকাংশ রাজ্যে দুই লটারিই চালু হয়। বর্তমানে প্রায় সব অঙ্গরাজ্য, ওয়াশিংটন ডিসি ও ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডসে এই লটারিগুলো খেলা যায়। যদিও কয়েকটি রাজ্যে এখনো লটারি নেই এবং কিছু অঞ্চলে নির্দিষ্ট গেম অনুপস্থিত। তবুও খেলোয়াড়ের সংখ্যা বাড়ায় পুরস্কারের তহবিল দ্রুত বড় হচ্ছে।

এই সব কারণ মিলিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের লটারিতে এক বিলিয়ন ডলারের জ্যাকপট এখন আর বিরল ঘটনা নয়, বরং নতুন স্বাভাবিক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments