যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটি বড়দিন উপলক্ষে রঙিন আলো, উৎসব আর আনন্দে ভরে ওঠে। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে ছিল ব্যাপক প্রস্তুতি ও উদযাপন। যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন স্মরণে প্রার্থনা, ধর্মীয় সমাবেশ, গির্জায় বিশেষ উপাসনা এবং পারিবারিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করা হয়।
বড়দিন উপলক্ষে আটলান্টিক সিটির বিভিন্ন এলাকায় চোখে পড়েছে আলোকসজ্জার বাহার। সড়ক, বিপণিবিতান, আবাসিক ভবন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো সাজানো হয় রঙিন বাতি ও ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে। শহরের গির্জাগুলোতে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা ও উপাসনা। এসব অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টানরা শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবকল্যাণের জন্য প্রার্থনা করেন। উৎসবের আবহে গির্জা প্রাঙ্গণে ছিল ভিড়, ছিল প্রার্থনার পাশাপাশি একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের দৃশ্য।
শিশুদের জন্য বড়দিন ছিল সবচেয়ে আনন্দের সময়। সান্তা ক্লজের উপস্থিতি, উপহার বিতরণ এবং সাজানো ক্রিসমাস ট্রি শিশুদের আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তারা অংশ নেয় বিভিন্ন উৎসবমূলক কর্মকাণ্ডে। বড়দিনের বিশেষ খাবার ও মিষ্টান্ন পরিবেশন করা হয় ঘরে ঘরে, যা উৎসবের স্বাদকে আরও গভীর করে তোলে।
ক্যাসিনো শহর হিসেবে পরিচিত আটলান্টিক সিটির বিখ্যাত ক্যাসিনোগুলোও বড়দিন উপলক্ষে আয়োজন করে নানা বর্ণিল অনুষ্ঠান। আলোকসজ্জা, সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং বিশেষ পার্টির মাধ্যমে ক্যাসিনো এলাকাগুলো হয়ে ওঠে আরও আকর্ষণীয়। এসব আয়োজনে অংশ নেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও পরিবার পরিজন নিয়ে এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং বড়দিনের আনন্দ ভাগ করে নেন।
প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে বড়দিন উপলক্ষে উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল লক্ষণীয়। অনেক পরিবার নিজেদের বাড়িঘর আলোকসজ্জায় সাজান। পার্টি ও সামাজিক জমায়েতে নাচ, গান আর আনন্দ উচ্ছ্বাসের মাধ্যমে তারা দিনটি উদযাপন করেন। প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের মাঝেও বড়দিনের প্রতি আগ্রহ ও উদ্দীপনা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। সংস্কৃতি ও উৎসবের এই মেলবন্ধন তাদের সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।
বড়দিন উপলক্ষে অনেক কর্মস্থলেও আয়োজন করা হয় উপহার বিনিময় ও ছোটখাটো অনুষ্ঠানের। সহকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে কর্মজীবনের ব্যস্ততার মাঝেও উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। একই সঙ্গে পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধনকে গুরুত্ব দিয়ে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যান। এই দিনটি তাদের কাছে শুধুই একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করার একটি উপলক্ষ।
শহরের পক্ষ থেকেও বড়দিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো হয়। আটলান্টিক সিটির প্রধান নির্বাহী নগর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাসিন্দাদের শান্তি ও সমৃদ্ধির কামনা করেন। সামগ্রিকভাবে বড়দিনকে ঘিরে সবার প্রত্যাশা ছিল, এই উৎসব সবার জীবনে সুখ, সম্প্রীতি ও মানবিক মূল্যবোধকে আরও শক্তিশালী করবে।
উৎসবের আলো, প্রার্থনার আবহ, পারিবারিক মিলন আর সামাজিক আনন্দে বড়দিন আটলান্টিক সিটিকে করে তোলে প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর। এই দিনটি শহরের নানা সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সহাবস্থানের বার্তা বহন করে।



