Wednesday, December 31, 2025
spot_img
Homeপ্রযুক্তি জগৎপিটার জ্যাকসনের সঙ্গে মোয়া পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা

পিটার জ্যাকসনের সঙ্গে মোয়া পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা

প্রায় ছয় শতাব্দী আগে পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বিশালাকার মোয়া পাখিকে আবার প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান কলোসাল বায়োসায়েন্সেসের বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞান ও কল্পবিজ্ঞানের মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা এই পরিকল্পনাটি অনেকের কাছেই জনপ্রিয় ‘জুরাসিক পার্ক’ চলচ্চিত্রের ধারণাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, যেখানে কৃত্রিমভাবে তৈরি ডিমের মাধ্যমে বহু বছর আগে হারিয়ে যাওয়া প্রাণীদের ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। বাস্তব বিজ্ঞানকে ভিত্তি করেই এবার একই ধরনের একটি উচ্চাভিলাষী প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী, মোয়া ছিল নিউজিল্যান্ডের একটি উড়তে না পারা বিশাল পাখি। এদের উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট পর্যন্ত হতো এবং ওজন ছিল ৫০০ পাউন্ডেরও বেশি। বিশাল দেহাকৃতি ও শক্তিশালী পা থাকা সত্ত্বেও মোয়া ছিল সম্পূর্ণ নিরীহ স্বভাবের পাখি। ইতিহাসবিদদের মতে, প্রায় ৬০০ বছর আগে নিউজিল্যান্ডে মাওরি জনগোষ্ঠীর বসতি স্থাপনের পর অতিরিক্ত শিকার ও পরিবেশগত চাপের কারণে ধীরে ধীরে এই প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। মানুষের হাতেই এই পাখির বিলুপ্তি ঘটেছিল বলে বিজ্ঞানীদের একটি বড় অংশ মনে করেন।

মোয়া পুনরুদ্ধারের এই প্রকল্পে কলোসাল বায়োসায়েন্সেসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক স্যার পিটার জ্যাকসন। তিনি শুধু এই উদ্যোগের অংশই নন, বরং প্রকল্পটির অন্যতম বিনিয়োগকারী হিসেবেও ভূমিকা রাখছেন। নিউজিল্যান্ডের প্রাকৃতিক ইতিহাস ও বিলুপ্ত প্রাণীর প্রতি তাঁর দীর্ঘদিনের আগ্রহ এই উদ্যোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর সহযোগিতায় নিউজিল্যান্ডের নাই টাহু রিসার্চ সেন্টারও এই গবেষণায় যুক্ত হয়েছে।

এই প্রকল্পে নাই টাহু রিসার্চ সেন্টার মাওরি সম্প্রদায় এবং নিউজিল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ক্যান্টারবেরির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছে। গবেষকদের মতে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দিয়েই পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ মোয়া শুধু একটি প্রাণী নয়, এটি নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর আগে ডায়ার উলফ বা প্রাগৈতিহাসিক নেকড়ে ফিরিয়ে আনার প্রকল্প শুরু করেছিল কলোসাল বায়োসায়েন্সেস। সে ক্ষেত্রে ধূসর নেকড়ের ডিএনএ ব্যবহার করার সুযোগ থাকায় কাজটি তুলনামূলকভাবে সহজ ছিল। কিন্তু মোয়ার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল। মোয়ার নিকটতম জীবিত আত্মীয় হিসেবে যে টিনামু পাখিকে চিহ্নিত করা হয়, তার সঙ্গে মোয়ার বিবর্তনগত দূরত্ব কয়েক কোটি বছরের। ফলে সরাসরি ডিএনএ মিলিয়ে কাজ করার সুযোগ সীমিত।

নতুন এই পরিকল্পনার আওতায় বিজ্ঞানীরা কোনো জীবিত পাখির ভ্রূণে জেনেটিক্যালভাবে পরিবর্তিত মোয়ার কোষ স্থাপনের কৌশল নিয়ে কাজ করছেন। গবেষকদের ধারণা, এসব কোষ ভ্রূণের জনন অঙ্গে পৌঁছালে সেই পাখি ভবিষ্যতে মোয়ার ডিম ও শুক্রাণু তৈরি করতে সক্ষম হতে পারে। তাত্ত্বিকভাবে সেই ডিম থেকে মোয়ার ছানা জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এই পদ্ধতিকে বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন।

বর্তমানে বিজ্ঞানীরা সারোগেট হিসেবে ইমু পাখিকে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচনা করছেন। ইমু পাখির উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট ২ ইঞ্চি, যা টিনামুর তুলনায় মোয়ার দেহগঠনের সঙ্গে কিছুটা বেশি সাযুজ্যপূর্ণ। তবে এখানেও বড় একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মোয়ার ডিমের আকার ইমুর ডিমের চেয়ে অনেক বড় ছিল। ফলে ইমু পাখির ডিমের ভেতরে হাইব্রিড ভ্রূণ সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারবে কি না, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে সংশয় রয়ে গেছে।

সব মিলিয়ে, মোয়া পাখিকে ফিরিয়ে আনার এই উদ্যোগ আধুনিক জীববিজ্ঞান ও জেনেটিক গবেষণার এক সাহসী পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সফল হলে এটি শুধু একটি বিলুপ্ত প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনার ঘটনা হবে না, বরং ভবিষ্যতে অন্যান্য বিলুপ্ত প্রাণী পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments