পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে কার্যকর ও আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে প্রস্তুত রয়েছে ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা কিয়েভের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। বার্লিনে রোববার মার্কিন দূত ও ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে বৈঠকের আগে তিনি এই অবস্থান তুলে ধরেন।
এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এমন এক সময়, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য সক্রিয় চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। তাঁর বিশেষ দূত ও একজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে রোববার বার্লিনে পৌঁছান। আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা কাঠামো এবং সম্ভাব্য সমঝোতার পথ খুঁজে বের করা।
বৈঠকের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ন্যাটো সদস্যপদের দাবি থেকে সরে আসা কিয়েভের পক্ষ থেকে একটি বড় ছাড়। এত দিন ভবিষ্যতে রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তিকেই সবচেয়ে শক্তিশালী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় সেই পথ সহজ না হওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবছে ইউক্রেন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় অংশীদার এবং অন্যান্য মিত্র রাষ্ট্র চাইলে ইউক্রেনকে এমন নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারে, যা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় বাধ্যতামূলক হবে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে একটি অনলাইন বার্তালাপে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, শুরু থেকেই ন্যাটোতে যোগ দেওয়া ছিল দেশের প্রধান লক্ষ্য, কারণ এটিকেই প্রকৃত নিরাপত্তার গ্যারান্টি মনে করা হতো। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার রাষ্ট্র এই সদস্যপদ নিয়ে পূর্ণ সমর্থন দেয়নি। এই বাস্তবতা থেকেই বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা সামনে এসেছে।
ইউক্রেন যদি ন্যাটোর সদস্যপদ অর্জন করতে না পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপানসহ অন্যান্য প্রভাবশালী দেশকে পৃথকভাবে ইউক্রেনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে বলে তিনি মত দেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এসব দেশের দেওয়া নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ভবিষ্যতে রাশিয়ার যেকোনো ধরনের সামরিক আগ্রাসন ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
এই প্রস্তাবকে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে একটি আপস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, কেবল রাজনৈতিক আশ্বাস নয়, এসব নিশ্চয়তা অবশ্যই আইনি কাঠামোর মধ্যে বাধ্যতামূলক হতে হবে। অন্যথায় তা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অবস্থান ইউক্রেনের জন্য একটি বড় নীতিগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। অন্যদিকে রাশিয়া ন্যাটোর সম্প্রসারণকে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখে আসছে। ফলে এই ইস্যু ইউক্রেন যুদ্ধের একটি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক উপাদান হয়ে উঠেছিল।
বার্লিনে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে মার্কিন বিশেষ দূত সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তিনি নির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তের কথা না বললেও আলোচনার পরিবেশকে ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা জানান, আলোচনার বিষয়বস্তু ও খসড়া নথিগুলো বর্তমানে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এই আলোচনায় বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং সোমবার আবারও আলোচনায় বসতে সবাই সম্মত হয়েছে। আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দেবেন বলে জানানো হয়েছে।
এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা কাঠামো কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।



