নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি তাঁর প্রশাসনিক রূপান্তর প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে একটি বিস্তৃত উপদেষ্টা কমিটি ঘোষণা করেছেন। নগর পরিচালনার ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণে এই কমিটি সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে জানানো হয়েছে। কমিটিতে অঙ্গরাজ্য ও ফেডারেল পর্যায়ের অভিজ্ঞ রাজনীতিক, আইনপ্রণেতা এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ শতাধিক সদস্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
ঘোষিত উপদেষ্টা কমিটিতে অঙ্গরাজ্যের গভর্নর, ব্রুকলিন থেকে নির্বাচিত একজন মার্কিন কংগ্রেস প্রতিনিধি এবং অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা রয়েছেন। নতুন প্রশাসনের নীতিনির্ধারণে বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত করতেই এত বড় পরিসরে উপদেষ্টা কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
শুক্রবার অনুষ্ঠিত কমিটির প্রথম বৈঠকের পর নবনির্বাচিত মেয়র সাংবাদিকদের জানান, এই উপদেষ্টা পরিষদ তাঁর ট্রানজিশন প্রক্রিয়ার একটি আনুষ্ঠানিক অংশ। তিনি বলেন, এই কমিটি প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কর্মীদের কল্যাণ, নগরবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাস এবং সার্বিক সেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তাঁর মতে, শহরের বাস্তব সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমন্বিত সমাধানের পথ খুঁজতেই অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নতুন প্রশাসনের কাঠামো ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল পদ নিয়ে জানতে চাইলে নবনির্বাচিত মেয়র জানান, বর্তমানে একটি শক্তিশালী দল গঠনের কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে চলতি বছরের শেষ নাগাদ সিটি হলের নেতৃত্বে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা দায়িত্ব নেবেন, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হবে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা হবে এবং উপযুক্ত সময়ে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এখনও পর্যন্ত নবনির্বাচিত মেয়র তাঁর প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ টিমের নাম প্রকাশ করেননি। তবে এর আগে তিনি ডেপুটি মেয়র এবং চিফ অফ স্টাফসহ সিটি হলের প্রথম দফার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার নাম ঘোষণা করেছিলেন। ওই ঘোষণাকে নতুন প্রশাসনের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যার মাধ্যমে নগর পরিচালনায় নতুন নীতি ও অগ্রাধিকার প্রতিফলিত হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এত বড় উপদেষ্টা কমিটি গঠনের মাধ্যমে নবনির্বাচিত মেয়র একদিকে যেমন বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চাইছেন, তেমনি অন্যদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোর বার্তাও দিচ্ছেন। নিউইয়র্ক সিটির মতো বহুমাত্রিক ও জটিল একটি মহানগর পরিচালনায় এই ধরনের সমন্বিত উপদেষ্টা কাঠামো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
নগরবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বাড়ানো নতুন নেতৃত্বের ঘোষিত অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম। উপদেষ্টা কমিটির সদস্যরা এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে নীতিগত পরামর্শ ও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে দিকনির্দেশনা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রথম বৈঠকেই এই কমিটির কার্যপরিধি ও ভবিষ্যৎ কাজের রূপরেখা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সব মিলিয়ে, নবনির্বাচিত মেয়রের ঘোষিত উপদেষ্টা কমিটি নিউইয়র্ক সিটির প্রশাসনিক রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আগামী দিনে এই কমিটির সুপারিশ ও পরামর্শ নতুন নগর সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কীভাবে প্রতিফলিত হয়, সে দিকেই নজর থাকবে রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ নাগরিকদের।



