নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা অর্ধেকে নামিয়ে আনার যে অঙ্গীকার ক্ষমতাসীন দলটি গত বছরের নির্বাচনের আগে করেছিল, সেটি বাস্তবায়ন নিঃসন্দেহে এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১০ বছরের মধ্যে এই সহিংসতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গত এক দশকে অনেক ধরনের অপরাধ কমলেও যৌন সহিংসতার হার কমেনি। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে প্রায় ১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৮২ শতাংশই নারী। একই সময়ে ছবি ও ভিডিওভিত্তিক যৌন অপরাধ উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। পাশাপাশি সহিংস পর্নোগ্রাফি ও অনলাইন প্রভাবকদের প্রভাবে তরুণ পুরুষদের মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তন নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
এই কঠিন বাস্তবতা এবং সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষাপটে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা সংক্রান্ত প্রতিশ্রুত কৌশলপত্র প্রকাশে বিলম্ব হওয়াটা অপ্রত্যাশিত নয়। বিষয়টি এমন এক সামাজিক সংকট, যা কোনো একটি মন্ত্রণালয়ের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এ বিষয়ে নেতৃত্ব দিলেও শিক্ষা ও বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার ছাড়া ঘোষিত লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়।
সরকার আশা করছে, এটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগের একটি সফল উদাহরণ হবে। তবে ঝুঁকিও রয়েছে। নানা জটিল বিষয় একসঙ্গে জড়ো হয়ে গেলে দায় কার, তা স্পষ্ট না হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিচারবিষয়ক মন্ত্রী সম্প্রতি এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, বিষাক্ত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ও সহিংসতার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। ঘোষিত কৌশলে প্রতিরোধকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় স্কুলের পাঠ্যক্রমে ‘স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক’ বিষয়ক নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি যেসব ছেলের মনোভাব ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হবে, তাদের জন্য বিশেষ পরামর্শমূলক ব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছে। আগামী বছর পুরুষ ও কিশোরদের বিভিন্ন সমস্যাকে কেন্দ্র করে একটি জাতীয় সম্মেলনের আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
এই উদ্যোগগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে তা ইতিবাচক ফল দিতে পারে। স্কুলে ছাত্রী ও নারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও আক্রমণ সত্যিই ভয়াবহ বাস্তবতা। অনলাইন ক্ষতি কমাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থারও দায়িত্ব রয়েছে। তবে এসব কর্মসূচি যেন অপরাধ দমন ও অপরাধীদের বিচারের মূল দায়িত্ব থেকে মনোযোগ সরিয়ে না নেয়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ অধিকাংশ অপরাধীই প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, যাদের ওপর এ ধরনের শিক্ষামূলক কর্মসূচির সরাসরি প্রভাব পড়বে না।
কৌশলপত্র প্রকাশের আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিশ্চিত করা দরকার ছিল। সেটি হলো গ্রুমিং গ্যাং সংক্রান্ত জাতীয় তদন্তের নেতৃত্ব নির্ধারণ। গত সপ্তাহে সেই দায়িত্বে একজন সাবেক শিশু অধিকারকর্মী নিয়োগ পাওয়ায় তদন্ত প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হওয়ার পথ খুলেছে। এখানে অপরাধীদের মানসিকতা যেমন পর্যালোচনা হবে, তেমনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গিও খতিয়ে দেখা হবে।
দেশব্যাপী পারিবারিক সহিংসতা সুরক্ষা আদেশ চালু হওয়াকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে আরও বিশেষায়িত পুলিশ কর্মকর্তার প্রতিশ্রুতিও আশাব্যঞ্জক। তবে এর জন্য আলাদা বাজেট না থাকায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিদ্যমান সম্পদ কীভাবে পুনর্বিন্যাস বা সম্প্রসারণ করা হবে, সে বিষয়ে মন্ত্রীদের স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত পরামর্শ না নেওয়ার অভিযোগও হতাশাজনক।
ভুক্তভোগী সহায়তা সেবায় অতিরিক্ত ৫৫০ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ একটি দৃশ্যমান অগ্রগতি। কিন্তু অনেকের মতে, ভুক্তভোগীদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা। বর্তমানে ক্রাউন কোর্টে মামলার বিশাল জটের কারণে যৌন সহিংসতার শিকার অনেক নারীকে বছরের পর বছর বিচার শুরুর অপেক্ষায় থাকতে হয়। দীর্ঘসূত্রতা বাড়লে ভুক্তভোগী বা সাক্ষীরা মামলা থেকে সরে দাঁড়ান, ফলে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হয়। পারিবারিক আদালতেও সমস্যা কম নয়। সেখানে আইনি সহায়তার ঘাটতি এবং অনিয়ন্ত্রিত বিশেষজ্ঞ ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো বড় প্রতিবন্ধকতা।
এক ধাক্কায় এসব সমস্যার সমাধান হওয়া বাস্তবসম্মত ছিল না। তবে নির্বাচনী ইশতেহারে যখন বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তখন তা বাস্তবায়নের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা কমাতে ঘোষিত অঙ্গীকার বাস্তবে রূপ দেওয়াই এখন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।



