দুই বছর আগের হতাশা যেন আজ রূপ নিয়েছে প্রতিশোধের উৎসবে। অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের মঞ্চে এবার আগুনঝরা পারফরম্যান্সে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনার তরুণরা। সান্তিয়াগোয় অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোয় নাইজেরিয়াকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে দলটি জায়গা করে নিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে। দুই বছর আগে আর্জেন্টিনায় আয়োজিত টুর্নামেন্টে ঠিক এই নাইজেরিয়ার কাছেই শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের। আজ সেই পুরনো ক্ষতই তারা সেলাই করল এক জোড়া গোলে নয়, বরং গোলবন্যায়।
গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে টানা জয় পাওয়া আর্জেন্টিনার তরুণ দল তখনই জানিয়ে দিয়েছিল, তারা এসেছে দাপিয়ে খেলতে। প্রথম পর্বে ৮ গোলের পর আজকের চার গোল যোগ হয়ে দলটির মোট গোলসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২। এই চার ম্যাচে গোল হজম করেছে মাত্র ২টি—সংখ্যাগুলোই বলে দিচ্ছে তাদের ফর্ম কতটা উজ্জ্বল। ডিয়েগো প্লাসেন্তের শিষ্যদের এই পারফরম্যান্স এখন আর্জেন্টিনার সিনিয়র দলের জন্য আশার আলো হয়ে উঠছে। জাতীয় দল যখন ২০২৬ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন ভবিষ্যতের মেসি-ডি মারিয়ারা নিজেদের সামর্থ্যের দারুণ প্রমাণ দিচ্ছে মাঠে।
আজকের ম্যাচে শুরু থেকেই আধিপত্য দেখায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের মাত্র ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডের মাথায় গোল করে দলকে এগিয়ে দেন বায়ার লেভারকুসেনের ১৯ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড সারকো। এই গোল অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ইতিহাসে দ্রুততম গোল হিসেবে নতুন রেকর্ড গড়েছে। এতদিন এই রেকর্ডটি ছিল কোলোচ্চিনির দখলে, যিনি ২০০১ সালে ২ মিনিটে গোল করেছিলেন।
প্রথম গোলের পরই আক্রমণের ধার আরও বাড়ায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ২৩ মিনিটে উইঙ্গার কারিজ্জো ফ্রি কিক থেকে জাদুকরী এক গোল করেন, যা প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে নিঃসন্দেহে অবাক করেছে। বিরতির পর ৫৩ মিনিটে আবারও গোল করেন কারিজ্জো, এবার বাঁ পায়ের শটে। এরপর ৬৬ মিনিটে ইন্টার মায়ামির উইঙ্গার মাতেও সিলভেত্তি ডান প্রান্ত থেকে দারুণ ড্রিবলে ডিফেন্ডার কাটিয়ে নিচু শটে গোল করে ব্যবধান ৪-০ করেন।
নাইজেরিয়ার পক্ষে পাল্টা আক্রমণ ছিল নগণ্য, আর্জেন্টিনার ডিফেন্সে ফাঁক খুঁজে পাওয়াই তাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছিল। ফলে একতরফা এই জয়ে দলটি ১৪ বছর পর অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল। সর্বশেষ এই স্তরে দেখা গিয়েছিল ২০১১ সালে।
এই জয়ের ফলে আগামী রোববার বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টায় কোয়ার্টার ফাইনালে মেক্সিকোর মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে, ফ্রান্স জাপানকে ১-০ গোলে হারিয়ে শেষ আটে উঠেছে এবং তাদের প্রতিপক্ষ নরওয়ে। নরওয়ে নিজেদের শেষ ষোলোয় প্যারাগুয়েকে হারিয়ে জায়গা করে নিয়েছে কোয়ার্টারে। আরেক কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়া মুখোমুখি হবে স্পেনের।
এই দাপুটে জয়ের মধ্য দিয়ে আবারও মনে করিয়ে দিল আর্জেন্টিনা, তাদের ফুটবলের ঐতিহ্য কেবল সিনিয়র দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তরুণ প্রজন্মও একই আবেগ, গতি আর মেধায় ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের পরবর্তী মঞ্চের দিকে।



