Sunday, December 28, 2025
spot_img
Homeবিজনেসতেলের দামে বড় ধস অব্যাহত বিশ্ববাজারে

তেলের দামে বড় ধস অব্যাহত বিশ্ববাজারে

বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামে নিম্নমুখী প্রবণতা আরও জোরালো হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শুক্রবার আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড ও ডব্লিউটিআই ক্রুড উভয় ধরনের তেলের দামই কমেছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত নেমে এসেছে, যা বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের আগে তেলের দামে এই পতন ঘটেছে। আলোচিত বৈঠকের আগে বাজারে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পরিবর্তন এলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়তে পারে। এই প্রত্যাশাই মূলত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সতর্কতা বাড়িয়েছে এবং দাম কমার প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করেছে।

শুক্রবার ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার্সের দাম ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলার ৬৪ সেন্টে দাঁড়িয়েছে। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমে ৫৬ ডলার ৭৪ সেন্টে নেমে আসে। এ দুটি সূচকই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বিশ্ববাজারে তেলের ওপর চাপ ক্রমাগত বাড়ছে।

চলতি বছরে তেলের দামে এই বড় ধরনের পতনের পেছনে একাধিক কারণ কাজ করছে। গত ১৬ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। ওই সময় সরবরাহ ঘাটতির আশঙ্কায় দাম সামান্য বাড়লেও সামগ্রিকভাবে পুরো বছরজুড়ে নিম্নমুখী প্রবণতাই বজায় রয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ব্রেন্ট ক্রুডের দাম কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ এবং ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের পর চলতি বছরেই তেলের দাম সবচেয়ে বেশি কমার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির ধীরগতির কারণে শিল্প ও পরিবহন খাতে জ্বালানির চাহিদা প্রত্যাশার তুলনায় কমছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন বাড়তে থাকায় ভবিষ্যতে বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের সম্ভাবনাও জোরালো হয়েছে। এসব বাস্তবতার সম্মিলিত প্রভাবেই তেলের দামে ধারাবাহিক পতন দেখা যাচ্ছে।

এদিকে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি এখন রাশিয়া ও ইউক্রেনের সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার দিকে। এই আলোচনায় কোনো ধরনের অগ্রগতি হলে রাশিয়ার জ্বালানি খাতে আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল বা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে রাশিয়ার তেল সরবরাহ বাড়বে, যা দামের ওপর আরও নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় জমি সংক্রান্ত বিষয়টি সবচেয়ে জটিল ইস্যু হিসেবে সামনে এসেছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জানা গেছে, প্রায় ২০ দফা সম্বলিত একটি শান্তিচুক্তির কাঠামো এবং নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বিষয়ক সমঝোতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বৈঠকের ঘোষণা দিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, নতুন বছরের আগেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হতে পারে। একই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাশিয়া যদি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, তাহলে প্রস্তাবিত শান্তি কাঠামো নিয়ে গণভোট আয়োজনের বিষয়েও তিনি প্রস্তুত রয়েছেন।

অন্যদিকে রাশিয়ার দিক থেকেও আলোচনার বিষয়ে সক্রিয়তা দেখা গেছে। ক্রেমলিন জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব পাওয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এই যোগাযোগকেও বাজার একটি সম্ভাব্য ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখছে, যদিও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।

বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে বৈশ্বিক তেল মজুত বৃদ্ধির প্রবণতা এবং অন্যদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের শান্তি আলোচনায় সামান্য অগ্রগতির আভাস, এই দুই কারণ মিলেই বিশ্ববাজারে তেলের দামে চাপ সৃষ্টি করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে তেলের নিম্নমুখী ধারা আরও কিছুদিন স্থায়ী হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments