যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে এক বিচারকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মামলায় জুরি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন। মিলওয়াকি কাউন্টির সার্কিট আদালতের এক বিচারককে ফেডারেল কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তবে একই মামলায় একজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার এড়াতে লুকিয়ে রাখার অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এই রায় যুক্তরাষ্ট্রে চলমান কঠোর অভিবাসন নীতির প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক ও আইনি বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত বিচারকের বিরুদ্ধে এপ্রিল মাসে দুটি অভিযোগ আনা হয়। একটি ছিল গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত বাধাদানের অভিযোগ, অন্যটি ছিল তুলনামূলক হালকা অপরাধ হিসেবে একজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার এড়াতে সহায়তার অভিযোগ। জুরি প্রথম অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করলেও দ্বিতীয় অভিযোগে খালাস দেন। বাধাদানের অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
জুরি সদস্যরা প্রায় ছয় ঘণ্টা আলোচনার পর এই রায় দেন। রায় ঘোষণার পর বিচারক ও তাঁর আইনজীবীরা আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে একটি কনফারেন্স কক্ষে চলে যান।
মামলার নথি অনুযায়ী, ফেডারেল তদন্ত সংস্থা ও গ্র্যান্ড জুরির অভিযোগপত্রে বলা হয়, অভিবাসন কর্মকর্তারা গত ১৮ এপ্রিল মিলওয়াকি কাউন্টির আদালতে যান। তাঁদের কাছে তথ্য ছিল যে মেক্সিকান এক অভিবাসী অবৈধভাবে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন এবং ওই দিন একটি অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের হামলা মামলায় তাঁর শুনানি ওই বিচারকের আদালতে নির্ধারিত ছিল।
নথিতে উল্লেখ করা হয়, বিচারক জানতে পারেন যে অভিবাসন কর্মকর্তারা তাঁর আদালতের বাইরে করিডরে অপেক্ষা করছেন। এরপর তিনি আদালত কক্ষ ছেড়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে যান এবং জানান যে তাঁদের প্রশাসনিক ওয়ারেন্ট ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের জন্য যথেষ্ট নয়। একই সঙ্গে তিনি কর্মকর্তাদের প্রধান বিচারকের দপ্তরে যেতে নির্দেশ দেন।
ফেডারেল কর্মকর্তারা করিডর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বিচারক ওই অভিবাসীর মামলার কার্যক্রম নথিভুক্ত না করে দ্রুত নিষ্পত্তি করেন। তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনজীবীকে জানান, পরবর্তী শুনানিতে ওই ব্যক্তি অনলাইনে অংশ নিতে পারবেন। এরপর তিনি অভিযুক্ত ও তাঁর আইনজীবীকে আদালতের একটি ব্যক্তিগত জুরি দরজা দিয়ে বের করে নিয়ে যান। তবে পরে অভিবাসন কর্মকর্তারা করিডরে ওই ব্যক্তিকে দেখতে পান, তাঁকে অনুসরণ করেন এবং বাইরে একটি সংক্ষিপ্ত ধাওয়ার পর গ্রেপ্তার করেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ পরে জানায়, ওই ব্যক্তিকে গত নভেম্বর মাসে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এই মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতি নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই বিচারককে একজন পক্ষপাতদুষ্ট বিচারক হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা অভিযোগ করেন, বিচার বিভাগের ভেতরে সম্ভাব্য বিরোধিতা দমন করতে তাঁকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিচার চলাকালে কৌঁসুলিরা যুক্তি দেন, বিচারক ইচ্ছাকৃতভাবে ফেডারেল কর্মকর্তাদের প্রধান বিচারকের দপ্তরে পাঠিয়ে সময় ও সুযোগ তৈরি করেছিলেন, যাতে অভিযুক্ত ব্যক্তি পালিয়ে যেতে পারেন। মামলার তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়া এক ফেডারেল কর্মকর্তা আদালতে সাক্ষ্য দেন যে কর্মকর্তারা করিডর ছাড়ার পরপরই বিচারক মামলাটি তালিকার শীর্ষে নিয়ে আসেন এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন।
এ ছাড়া আদালতে এমন অডিও রেকর্ডিং উপস্থাপন করা হয়, যেখানে বিচারককে তাঁর কোর্ট রিপোর্টারকে বলতে শোনা যায় যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পেছনের দরজা দিয়ে বের করে নেওয়ার দায় তিনি নিজেই নেবেন।
অন্যদিকে অভিযুক্তের আইনজীবীরা দাবি করেন, বিচারক আদালতের নির্ধারিত প্রোটোকল অনুসরণ করছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, আদালত চত্বরে কোনো অভিবাসন কর্মকর্তা উপস্থিত হলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো নিয়ম, এবং বিচারক ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেননি।
এই রায় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন আইন প্রয়োগ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার সীমা নিয়ে চলমান বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।



