Saturday, December 27, 2025
spot_img
Homeএডুকেশনডিজিটাল পরীক্ষার পথে এগোচ্ছে ইংল্যান্ড

ডিজিটাল পরীক্ষার পথে এগোচ্ছে ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ডের পাবলিক পরীক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। দেশটির যোগ্যতা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা জানায়, আগামী দশকের শেষ নাগাদ কিছু জিসিএসই এবং এ লেভেল পরীক্ষা ল্যাপটপে নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষায় হাতব্যথা ও লেখার ক্লান্তি নিয়ে সাম্প্রতিক অভিযোগ সামনে আসার পর এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। অনেকেই জানিয়েছেন যে নিয়মিত হাতে লেখার অভ্যাস কমে যাওয়ায় কলম ধরে দীর্ঘ সময় লেখার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে।

এ পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তিন মাসব্যাপী এক জনপরামর্শ প্রক্রিয়া শুরু করেছে যেখানে অনস্ক্রিন পরীক্ষার সম্ভাব্য রূপরেখা নিয়ে মতামত সংগ্রহ করা হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী প্রধান চারটি পরীক্ষাবোর্ডকে দুটি করে নতুন অনলাইন পরীক্ষার সিলেবাস তৈরি করতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এসব সিলেবাস এমন বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে হবে যেগুলোতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক কম এবং বার্ষিক অংশগ্রহণ এক লাখের নিচে। এই কারণে জিসিএসই গণিতকে তালিকায় রাখা হয়নি, তবে জিসিএসই জার্মান অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

ডিজিটাল পরীক্ষার সম্ভাবনা যতই বাড়ুক, সমান প্রবেশাধিকার, সাইবার নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত ত্রুটির ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ পেয়েছে। পাশাপাশি স্কুলগুলোতে কম্পিউটার স্থাপনের জন্য উপযুক্ত স্থান ও পর্যাপ্ত ডেস্ক নিশ্চিত করাও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা নিজেদের ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না এবং প্রতিটি স্কুল চাইলে কাগজভিত্তিক পরীক্ষার পাশাপাশি অনস্ক্রিন পরীক্ষার সংস্করণও বেছে নিতে পারবে। এই দুটি সংস্করণ আলাদা যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।

নিয়ন্ত্রণ সংস্থার প্রধান জানান, তিনি এই পরিবর্তন নিয়ে একদমই হঠকারী নন এবং প্রচলিত পেন ও পেপারভিত্তিক পরীক্ষা ইংল্যান্ডের মূল্যায়ন ব্যবস্থায় এখনও কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, ইংল্যান্ডের যোগ্যতা ব্যবস্থার মান ও ন্যায্যতা বজায় রাখা জরুরি এবং অনলাইন পরীক্ষা চালু করতে হলে তা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এবং পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করে এগোতে হবে।

শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা বলছে, নিয়মিত কিবোর্ড ব্যবহার করা শিক্ষার্থীদের হাতের লেখা দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, হাতে লেখার অভ্যাস কমে গেছে, তাই লেখা খারাপ হয়, হাতে ব্যথা বাড়ে বা দীর্ঘক্ষণ কলম ধরা কঠিন মনে হয়। অন্যদিকে অনেকে মত দিয়েছেন, হাতের লেখার শারীরিক প্রক্রিয়া জ্ঞানীয় বিকাশের সঙ্গে যুক্ত এবং তা অনস্ক্রিন লেখার চেয়ে ভিন্ন অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরীক্ষায় কিবোর্ড ব্যবহার করা শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করেছে। গবেষকেরা রাজ্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে লেখা ও ওয়ার্ড প্রসেসরে লেখা পরীক্ষার তুলনা করেন এবং দেখা যায়, সব শিক্ষার্থীই বিশেষ করে যাদের শেখায় সমস্যা আছে, তারা কিবোর্ড ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে।

বর্তমানে ইংল্যান্ডে কম্পিউটার সায়েন্সসহ কিছু পরীক্ষার অল্প অংশ অনলাইনে হয়। এছাড়া যেসব শিক্ষার্থীর বিশেষ শিক্ষাগত প্রয়োজন রয়েছে, তারা অনুমতি পেলে পরীক্ষার পরিবেশে কিবোর্ড ব্যবহার করতে পারে।

নিয়ন্ত্রণ সংস্থার প্রধান জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করলে দেখা যায়, অনস্ক্রিন মূল্যায়ন নিয়ে তাদের মত বিভক্ত। কেউ কেউ অনলাইন পদ্ধতিকে বেশি সুবিধাজনক ভাবছেন, অন্য অংশ মনে করেন প্রচলিত পদ্ধতি আরও বিশ্বাসযোগ্য ও আনুষ্ঠানিক মনে হয়।

দেশটির শিক্ষা সচিব বলেন, অনলাইন পরীক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে এবং ডিজিটাল বিশ্বের সঙ্গে মূল্যায়ন পদ্ধতিকে সামঞ্জস্য করা গেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্যও তা উপকারী হতে পারে। তবে পুরো প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে, নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং সর্বোপরি ন্যায়সংগতভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

জনপরামর্শ প্রক্রিয়া আগামী ৫ মার্চ পর্যন্ত চলবে। অনুমোদন পেলে নতুন সিলেবাস স্কুলগুলোতে পৌঁছবে প্রথম পরীক্ষার তিন বছর আগে এবং পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হতে পারে ২০৩০ সালের দিকে।

স্কুল ট্রাস্টগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, প্রযুক্তি মূল্যায়নে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করলেও এর প্রয়োগে যথাযথ সুরক্ষা ও সতর্কতা জরুরি। এক পরীক্ষাবোর্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্কুলগুলোকে ডিজিটাল ব্যবধান কমাতে বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন হবে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ শিক্ষক সংকট মোকাবিলায় আরও সমন্বয় দরকার। তাঁর মতে, পরিবর্তিত বিশ্বে শিক্ষার্থীদের সক্ষম করে তুলতে গবেষণা, সরকারি সহায়তা ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর সমন্বিত উদ্যোগ অপরিহার্য।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments