Tuesday, December 23, 2025
spot_img
Homeইমিগ্রেশন তথ্যট্রাম্প যুগে কঠিন হলো নাগরিকত্বের শেষ ধাপ

ট্রাম্প যুগে কঠিন হলো নাগরিকত্বের শেষ ধাপ

যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসকারী বহু অভিবাসীর জন্য নাগরিকত্ব অর্জনের শেষ ধাপ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে নতুন নীতিগত সিদ্ধান্ত ও প্রশাসনিক কড়াকড়ির ফলে বহু গ্রিন কার্ডধারী, যারা দীর্ঘ যাচাই-বাছাইয়ের সব ধাপ পেরিয়ে নাগরিকত্বের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিলেন, তারা হঠাৎ করেই অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।

গ্রিন কার্ডধারীরা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি যাচাই হওয়া শ্রেণির মধ্যে পড়েন। তবুও নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলে তাদের আরও বিস্তৃত পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে থাকে সরকারি ব্যাকগ্রাউন্ড চেক, অভিবাসন কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার এবং ইংরেজি ও নাগরিকত্ব সংক্রান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার বাধ্যবাধকতা। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হলো নাগরিকত্বের শপথ অনুষ্ঠান।

কিন্তু চলতি মাসে ট্রাম্প প্রশাসন কিছু দেশের নাগরিকদের জন্য অভিবাসন সংক্রান্ত আবেদনে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিতাদেশ জারি করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে নির্ধারিত নাগরিকত্ব শপথ অনুষ্ঠান হঠাৎ বাতিল হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের দৃষ্টিতে তথাকথিত উচ্চঝুঁকির ১৯টি দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই স্থগিতাদেশ কার্যকর হয়েছে। তালিকায় রয়েছে কিউবা, ইরান, হাইতি ও সোমালিয়াসহ একাধিক দেশ।

আইনজীবীরা বলছেন, যাদের নাগরিকত্ব শপথ অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারিত ছিল, তারা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সব যাচাই শেষ করেছেন। তবুও নতুন নীতির কারণে তাদের আবারও পুনরায় যাচাইয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে। অভিবাসন আইনে কাজ করা একাধিক আইনি সহায়তা সংস্থার মতে, এটি শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং বহু মানুষের জন্য মানসিক ও আইনি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এই স্থগিতাদেশের পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসন চলতি বছর আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যা নাগরিকত্ব অর্জনের পথকে জটিল করে তুলছে। এর মধ্যে রয়েছে নাগরিকত্ব প্রস্তুতিমূলক সহায়তা দেওয়া সংস্থাগুলোর অনুদান বাতিল, আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কঠোর নজরদারি, আবেদনকারীর তথাকথিত নৈতিক চরিত্র যাচাই করতে পাড়াভিত্তিক তদন্ত এবং আরও কঠিন নাগরিকত্ব পরীক্ষা চালু করা।

বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এর প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কোথাও নাগরিকত্ব শপথ অনুষ্ঠানের দিনেই আবেদনকারীদের অনুষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, আবার কোথাও শেষ মুহূর্তে ফোন করে অনুষ্ঠান বাতিলের খবর জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা অভিবাসীরা, যারা বছরের পর বছর ধরে এই দিনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তারা নিজেদের প্রস্তুত অবস্থায় পেয়েও হঠাৎ থমকে যাচ্ছেন।

একাধিক এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সংস্থা ছোট পরিসরের নাগরিকত্ব অনুষ্ঠান কমিয়ে দিয়েছে। আগে যেসব অনুষ্ঠান স্থানীয় আদালত, পাবলিক লাইব্রেরি বা ঐতিহাসিক ভবনে হতো, সেগুলো বাতিল করা হচ্ছে। সংস্থাটি এখন আদালতভিত্তিক শপথ অনুষ্ঠান বন্ধ করে কেবল প্রশাসনিক ভবনে অনুষ্ঠান আয়োজনের দিকে যেতে চায়। এতে অনেক আবেদনকারীকে নিজ জেলার বাইরে গিয়ে শপথ নিতে হতে পারে, যা সময় ও ব্যয়ের চাপ বাড়াচ্ছে।

এদিকে, নাগরিকত্ব প্রস্তুতির জন্য যে ইংরেজি ও নাগরিকত্ব শিক্ষা কর্মসূচিগুলো চালু ছিল, সেগুলোর জন্য দেওয়া ফেডারেল অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক অঙ্গরাজ্যে কার্যত এসব ক্লাস বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আসা শরণার্থী ও অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। নতুন নীতির কারণে তাদের অনেকের আবেদন প্রক্রিয়া থমকে গেছে, কেউ কেউ আবেদনই করতে পারছেন না।

এ ছাড়া সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পুনরায় চালু করা হয়েছে আবেদনকারীর নৈতিক চরিত্র যাচাইয়ের জন্য পাড়াভিত্তিক তদন্ত। এতে অভিবাসন কর্মকর্তারা আবেদনকারীর প্রতিবেশী, বাড়িওয়ালা, সহকর্মী ও পরিচিতজনের সঙ্গে কথা বলে তার আচরণ ও সামাজিক ভূমিকা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছেন। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেদনকারীর কার্যকলাপও আগের চেয়ে বেশি কঠোরভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

আইনি সহায়তা সংস্থাগুলোর অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, নতুন নীতির ফলে কর সংক্রান্ত জটিলতা বা অন্যান্য প্রশাসনিক বিষয়কে কেন্দ্র করে আবেদন বাতিলের হার বেড়েছে, এমনকি যেসব আবেদনকারী নিয়মিত কিস্তিতে কর পরিশোধ করছিলেন, তারাও সমস্যায় পড়ছেন। আগে অপরাধমূলক রেকর্ড না থাকলেই যথেষ্ট মনে করা হতো, এখন এর পাশাপাশি আবেদনকারীর পারিবারিক দায়িত্ব, স্থায়ী চাকরি, শিক্ষা ও সামাজিক সম্পৃক্ততাকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এই বাড়তি কড়াকড়ির কারণে অনেক আইনজীবী এখন তাদের ক্লায়েন্টদের নাগরিকত্বের আবেদন না করে শুধু গ্রিন কার্ড নবায়নের পরামর্শ দিচ্ছেন, যাতে বিদ্যমান বৈধ অবস্থান ঝুঁকিতে না পড়ে। সামনে আরও উন্নত প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আবেদন যাচাইয়ের জন্য নতুন কেন্দ্র চালুর পরিকল্পনাও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সব মিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব অর্জনের শেষ ধাপটি এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি জটিল, দীর্ঘ ও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে, যা হাজারো বৈধ অভিবাসীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments