ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ও নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিরোধের অবসান ঘটেছে সমঝোতার মাধ্যমে। এই সমঝোতা অনুযায়ী, আগে স্থগিত রাখা প্রায় ৭৯০ মিলিয়ন ডলারের ফেডারেল গবেষণা তহবিল আবার বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দেওয়া হবে। এর বিপরীতে নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় আগামী তিন বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগে মোট ৭৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধে সম্মত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ যৌথভাবে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এই বিরোধের সূত্রপাত ঘটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু নীতিগত অবস্থানকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ ছিল, ভর্তি নীতি, ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটদের অংশগ্রহণ এবং ক্যাম্পাসে সংঘটিত ইহুদিবিরোধী ঘটনার বিরুদ্ধে যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যর্থ হয়েছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল গবেষণা অনুদান স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে বিচার বিভাগ আনুষ্ঠানিক তদন্তও শুরু করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বলেন, ট্রেজারি বিভাগে ৭৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা কোনো ধরনের দোষ স্বীকারের ইঙ্গিত নয়। এটি পুরোপুরি একটি সমঝোতামূলক সিদ্ধান্ত, যার লক্ষ্য ছিল দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে গবেষণা কার্যক্রমকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনা।
সমঝোতার অংশ হিসেবে নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশেষ বোর্ড কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটির দায়িত্ব হবে চুক্তির শর্তগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা তদারক করা। এ ছাড়া প্রতি তিন মাস অন্তর ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে অগ্রগতি ও সম্মতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জোর দিয়ে জানিয়েছে, এই চুক্তির মাধ্যমে তাদের একাডেমিক স্বাধীনতা বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হবে না। শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থী ভর্তি, পাঠ্যক্রম নির্ধারণ এবং গবেষণার বিষয়বস্তু আগের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সিদ্ধান্তে পরিচালিত হবে।
স্থগিত থাকা অর্থ পুনর্বহালের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যেই তহবিল ফেরত আসা শুরু হবে এবং এক মাসের মধ্যে পুরো অর্থ সম্পূর্ণভাবে পুনর্বহাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প, বিশেষ করে চিকিৎসা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের কাজ আবার পূর্ণ গতিতে চালু করা সম্ভব হবে।
ক্যাম্পাসে ইহুদিবিরোধী ঘটনা প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা, অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থাকে আরও বিস্তৃত ও সহজ করা এবং ইহুদি শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা কাঠামো গড়ে তোলা। তবে ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থী ও কর্মীদের পরিচয়, সর্বনাম ব্যবহার বা স্বপরিচয় প্রকাশের বিষয়ে কোনো নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয় স্পষ্ট করেছে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে, যাতে তারা প্রশাসনের নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে নিজেদের নীতি সামঞ্জস্য করে। এর অংশ হিসেবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুদান স্থগিত বা কমিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ও অনুরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়ে। সেখানে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলারের গবেষণা অনুদান ফিরে পেতে প্রতিষ্ঠানটি ৩০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে এবং একই অঙ্কের অর্থ কৃষি গবেষণায় বিনিয়োগে সম্মত হয়।
তবে নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তারা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত কিছু বিশেষ নীতি-সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, যেগুলো অন্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। সব মিলিয়ে এই সমঝোতাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি বাস্তবধর্মী ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে, যা গবেষণা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।



