গাজায় চলমান সংঘাত থামাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে ইসরায়েল ও হামাস প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর সম্ভাব্য ভূমিকাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের অবস্থানে স্পষ্ট বিভেদ তৈরি হয়েছে। ফলে আলোচনার পরবর্তী ধাপ সামনে এগোলেও পরিস্থিতি জটিল থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রোববার জানান, যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া পরিকল্পনায় থাকা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনো পরিষ্কার ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে। তাঁর মতে, যুদ্ধবিরতির সময় অস্ত্র ব্যবহার না করা বা অস্ত্র জমা দেওয়ার মতো বিষয়গুলোতে তারা আলোচনায় রাজি। তবে নিরস্ত্রীকরণের দায়িত্ব কোনো আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাবে তারা সম্মত হতে পারবে না।
এই কর্মকর্তা জানান, সীমান্ত এলাকায় জাতিসংঘের বাহিনী অবস্থান করে যুদ্ধবিরতি তদারক করুক, লঙ্ঘনের ঘটনা শনাক্ত করে জানাক এবং যেকোনো উত্তেজনা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখুক, এ ধরনের কাঠামো তারা স্বাগত জানায়। তবে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে বাহিনীটির কোনো প্রকার প্রশাসনিক কর্তৃত্বের ধারণা হামাসের পক্ষ থেকে সরাসরি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
এদিকে এই মন্তব্যের কিছুক্ষণ আগেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন যে মাসের শেষদিকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকের মূল আলোচনা থাকবে গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার নতুন ধাপ এবং সেখানে ইসরায়েলের কৌশলগত লক্ষ্যগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা নিয়ে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্য হলো গাজায় হামাসের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের অবসান নিশ্চিত করা এবং পরিকল্পনায় দেওয়া সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হওয়া।
যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের নিরস্ত্রীকরণকে অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে রাখা হয়েছে। তবে হামাসের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য এসেছে তাতে স্পষ্ট নয় যে তাদের অবস্থান ইসরায়েলের পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের প্রত্যাশাকে কতটা পূরণ করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, হামাস প্রতিরোধ করার অধিকার রাখে এবং এ অধিকার কোনো পক্ষই অস্বীকার করতে পারে না।
তাঁর মতে, অস্ত্র নামিয়ে রাখার প্রক্রিয়া শুরু হবে কেবল তখনই, যখন তা একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক রূপরেখার অংশ হবে। সেই রূপরেখা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাবে এবং যেখানে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি কমপক্ষে পাঁচ থেকে দশ বছর স্থায়ী হবে এমন নিশ্চয়তা থাকবে।
মার্কিন পরিকল্পনায় একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ খোলা রাখা হলেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বহুদিন ধরে এ ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তাঁর দাবি, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা হামাসকে পুরস্কৃত করার সমান হবে। ফলে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় অগ্রগতির সুযোগ থাকলেও দুই পক্ষের অবস্থানগত পার্থক্য সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে আরও তীব্র হতে হবে।



