Tuesday, December 23, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যওদেসায় হামলা বাড়াল রাশিয়া, অন্ধকারে শহর

ওদেসায় হামলা বাড়াল রাশিয়া, অন্ধকারে শহর

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের কৌশলগত শহর ওদেসায় সামরিক অভিযান আরও জোরদার করেছে রাশিয়া। সাম্প্রতিক ধারাবাহিক হামলার ফলে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং লাখো মানুষ অন্ধকারে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। একই সঙ্গে ইউক্রেনের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্দর অবকাঠামোও বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

ইউক্রেন সরকারের এক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মস্কো এখন পরিকল্পিতভাবে ওদেসাকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। তাঁর মতে, যুদ্ধের গতিপথ ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের দিকে ঘুরে যাচ্ছে এবং বিষয়টি আগেই আশঙ্কা করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক হামলার ধরন ও লক্ষ্যবস্তু বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয় যে, ওদেসার বন্দর, জ্বালানি অবকাঠামো এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা রুশ বাহিনীর মূল টার্গেটে পরিণত হয়েছে।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধান এসব হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, সমুদ্রপথে ইউক্রেনের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কার্যত অচল করে দিতেই রাশিয়া বারবার আঘাত হানছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, কৃষ্ণসাগর হয়ে শস্য ও অন্যান্য পণ্য পরিবহন বন্ধ করাই এই হামলার প্রধান উদ্দেশ্য।

চলতি ডিসেম্বরের শুরুতেই রাশিয়ার সর্বোচ্চ নেতৃত্ব ঘোষণা দিয়েছিল যে, ইউক্রেনকে সমুদ্রপথ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করা হবে। কৃষ্ণসাগরে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এই হুমকি দেওয়া হয়। সেই ঘোষণার পর থেকেই ওদেসা ও আশপাশের বন্দর এলাকায় হামলার মাত্রা বেড়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

আঞ্চলিক প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার সন্ধ্যায় ওদেসা বন্দরে রুশ হামলায় একটি বেসামরিক জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে রোববার রাতের হামলায় শহরের প্রায় এক লাখ বিশ হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। একই হামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যেখানে কনটেইনারভর্তি বিপুল পরিমাণ আটা ও উদ্ভিজ্জ তেল পুড়ে যায়। এতে শুধু অবকাঠামোগত ক্ষতিই হয়নি, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাও চাপের মুখে পড়েছে।

গত সপ্তাহে ওদেসার পূর্বে অবস্থিত পিভডেনি বন্দরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আটজন নিহত এবং অন্তত ত্রিশজন আহত হন। পৃথক আরেকটি হামলায় একটি গাড়িতে থাকা এক নারী ও তাঁর তিন সন্তান প্রাণ হারান। ওই ঘটনায় ইউক্রেন ও মলদোভাকে সংযুক্ত করা একমাত্র সেতুটি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়, যা আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।

কিয়েভ ও খারকিভের পর ওদেসা ইউক্রেনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। জাপোরিঝঝিয়া, খেরসন ও মাইকোলাইভের মতো গুরুত্বপূর্ণ বন্দর রুশ বাহিনীর দখলে চলে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতি এখন প্রায় পুরোপুরি ওদেসা বন্দরের ওপর নির্ভরশীল। এই বন্দর দিয়েই ইউক্রেন আন্তর্জাতিক বাজারে শস্য ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানি চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে একটি বিশেষ করিডর ব্যবহার করে রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও তুরস্কের উপকূল ঘেঁষে শস্য পরিবহন অব্যাহত রাখা হয়েছে।

হামলার চাপ বাড়তে থাকায় ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা দিয়েছেন, ওদেসা অঞ্চলের বিমান প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নতুন একজন কমান্ডার শিগগিরই নিয়োগ দেওয়া হবে। সম্প্রতি দায়িত্বে থাকা কমান্ডারকে পদ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে ওদেসায় হামলা জোরদারের এই সময়েই যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে শান্তি আলোচনা চলছে। সেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ দূতের উপস্থিতিতে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা একটি খসড়া শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। তবে মস্কোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনায় ইউক্রেন বা ইউরোপ কোনো ধরনের পরিবর্তন আনলে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাবে।

সামগ্রিকভাবে ওদেসাকে কেন্দ্র করে চলমান এই উত্তেজনা ইউক্রেন যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে এবং কৃষ্ণসাগর অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments