বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় নতুন এক মাইলফলক স্থাপন করলেন টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। ব্যক্তিগত সম্পদমূল্যের হিসাবে ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তাঁর সম্পদ ৭০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। ধারাবাহিকভাবে রেকর্ড গড়ার মধ্য দিয়ে তিনি বৈশ্বিক অর্থনীতির আলোচনায় আবারও কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন।
ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রকাশিত রিয়েল টাইম বিলিয়নিয়ার্স তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে টেসলার প্রধান নির্বাহীর মোট সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৪৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৪ হাজার ৮৯০ কোটি ডলারের সমান। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এক ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক হওয়ার দ্বারপ্রান্তে তিনি পৌঁছাতে পারেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা।
এর আগে মাত্র এক সপ্তাহ আগেই তাঁর সম্পদমূল্য ৬০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে আনার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে তাঁর মোট সম্পদে, যা দ্রুতই ৬০০ বিলিয়ন ডলারের সীমা অতিক্রম করে। এই তথ্য আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই ৭০০ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতের রায়। ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট টেসলার প্রধান নির্বাহীর বিশাল অঙ্কের বেতন প্যাকেজ বহাল রাখার নির্দেশ দেয়। গত শুক্রবার দেওয়া এই রায়কে তাঁর জন্য বড় ধরনের আইনি সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত একটি প্রাতিষ্ঠানিক চুক্তির আওতায় তাঁর পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারমূল্য বাড়ায় বর্তমানে ওই বেতন প্যাকেজের বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। শেয়ারগুলো হাতে পেলে টেসলা প্রতিষ্ঠানে তাঁর মালিকানা ১২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৮ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছাবে।
বিশ্বব্যাপী গবেষণা সংস্থা ইনফরমা কানেক্ট একাডেমির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যেই তিনি এক ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক হতে পারেন। সংস্থাটির তথ্য বলছে, তাঁর সম্পদমূল্য প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে তিনিই যে বিশ্বের প্রথম লাখোকোটিপতি হবেন, তা নিয়ে সংশয় খুব কম।
তবে এই দৌড়ে প্রতিযোগিতা একেবারে নেই, এমন নয়। ইনফরমার তথ্যমতে, বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ২০২৮ সালের মধ্যে ট্রিলিয়নিয়ার হওয়ার সম্ভাবনায় রয়েছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বৈপ্লবিক অগ্রগতির পেছনে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন চিপের ভূমিকা বড় হওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠানের বাজারমূল্য দ্রুত বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সংশ্লিষ্ট প্রধান নির্বাহীর ব্যক্তিগত সম্পদেও, যা তাঁকে শতকোটিপতি হওয়ার প্রতিযোগিতায় রেখেছে।
এদিকে বিশ্বের অন্যান্য শীর্ষ ধনীদের সঙ্গে টেসলার প্রধান নির্বাহীর ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে। ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনীর সঙ্গে তাঁর সম্পদের পার্থক্য প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রযুক্তি উদ্যোক্তার সম্পদমূল্য ২৫২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় স্থানে থাকা সফটওয়্যার উদ্যোক্তার সম্পদমূল্য ২৪২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
চতুর্থ স্থানে থাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর সম্পদমূল্য ২৩৯ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। পঞ্চম স্থানে থাকা প্রযুক্তি উদ্যোক্তার সম্পদমূল্য ২৩৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্লেষকদের মতে, বৈদ্যুতিক যান, রোবোটিকস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে পুঁজি করে টেসলার প্রধান নির্বাহী নিজেকে ক্রমাগত নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। এই বহুমুখী ব্যবসায়িক বিস্তারের ফলে তিনি ধনীদের তালিকায় অন্যদের তুলনায় অনেকটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছেন।



